বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ইং, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ ।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল রোববার বাম গণতান্ত্রিক জোটের আধাবেলা হরতাল পালন করেছে। তবে অনলাইনে অনেকেই সাড়া দিলো মাঠে হরতালের সমর্থনে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। গত ৩০ জুন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরদিন ১ জুলাই হরতালের ডাক দেয় ৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট। গ্যাসের এই বাড়তি দাম ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। গ্যাসের বর্ধিত দাম অনুযায়ী এক চুলার জন্য গ্রাহকদের ৭৫০ টাকার স্থলে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার গ্রাহকদের ৮০০ টাকার স্থলে ৯২৫ টাকা করে গুনতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে ২২ ভাগ। এছাড়া আবাসিকের প্রি-পেইড মিটারে গ্যাসের দাম ৩৮ ভাগ বাড়িয়ে ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়েছে। পাশাপাশি সিএনজির দাম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানিতে ১৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। এই ঘাটতি মেটাতে ভোক্তার পকেট থেকে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা তোলা হবে। আর সরকার ভর্তুকি দেবে ৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সব মিলিয়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে কমিশন, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোয় গ্রাহকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গ্রাহকের গ্যাসের বিল থেকেই একটা অংশ জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল ও গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে যায়। এরমধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের টাকা সরকার এলএনজি আমদানিতে বিনিয়োগ করছে।
এবার ৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি দেবে সরকার। যদিও এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ১৫ ভাগ ভ্যাট এবং ২ ভাগ অগ্রিম পরিশোধযোগ্য উৎসে কর রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ এই কর প্রত্যাহারের আবেদন করলেও অর্থ বিভাগ তা আমলে নেয়নি। গ্যাসের গড় দাম ঘনমিটারে ৭.৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৮০ টাকা করা হয়েছে।
তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এতে শিল্প খাতের বিকাশ রুদ্ধ হবে, সেই সঙ্গে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়। শুধু শিল্প খাতে নয়, আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
বস্তুতঃ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বারবার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, কেবল উচ্চবিত্তের মানুষই গ্যাস ও বিদ্যুতের গ্রাহক নন, সমাজের নি¤œবিত্তের মানুষও গ্যাস ও বিদ্যুতের গ্রাহক। কাজেই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে নি¤œবিত্ত মানুষের সামর্থের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হলে গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরি। কিন্তু দাম বৃদ্ধি করা হলে এতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এসব বিষয় চিন্তা করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।