আজ জেলহত্যা দিবস

আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে হবে

আজ জেলহত্যা দিবস। জাতির জন্য কলঙ্কের একটি দিন। বিশ্ব মানবতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাসেও এমন কলঙ্কের অধ্যায় আর নেই। আমাদের জাতীয় জীবনে ৩ নভেম্বর এক শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান বন্দি অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার স্থপতি। এই মহান নেতা শত জেল-জুলুম উপেক্ষা করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁর অবর্তমানে তাঁরই নামে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকার গঠন, রণনীতি ও রণকৌশল প্রণয়ন, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, কূটনৈতিক তৎপরতা, শরণার্থীদের তদারকিসহ মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করতে অসামান্য অবদান রাখেন। জাতি তাঁদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে, করতে থাকবে ততদিন-যতদিন একটিও বাঙালি বেঁচে থাকবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর খুনি মোশতাকের নির্দেশে এই জাতীয় চার নেতাকে গুলি করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। জাতীয় এ চার নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ও চেতনাকে নির্মূল করা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রাজনৈতিক ধারার নেতৃত্ব ধ্বংস করা। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ সুদীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র এবং তাদের হত্যার রাজনীতিকে পরাজিত করেছে। খুনিদের দম্ভ-অহংকার সব ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে দেশের মানুষ। খুনিদের বিচার হয়েছে, শাস্তির রায় হয়েছে। যারা পলাতক তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের অপেক্ষা। বাংলাদেশ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আইনের শাসনের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ঘোষিত হয়েছে। এ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রসরমান একটি দেশ। ঐতিহ্য, মর্যাদা ও গৌরবের হাত ধরে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির সোপানে।

পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শাসকগোষ্ঠি কখনও সামরিক লেবাসে, কখনও গণতন্ত্রের মুখোশ পরে, অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার বদলে পুরস্কৃত করে। খুনিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করে।

ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা; মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আড়াল করে খণ্ডিত ও ভুল ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা এবং জাতীয় রাজনীতিকে জটিল করে তোলার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

কিন্তু জাতির মধ্যে অতৃপ্তি থেকেই গেছে। আর সেটা হল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও জেল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নেপথ্যের কুশীলবদের এখনো চিহ্নিত করা যায় নি। গণমানুষের পক্ষ থেকে এ দাবি এখনো উচ্চারিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারও এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি জেল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দেশি-বিদেশি নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং জেল হত্যাকাণ্ডের সাথে নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। দেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, হত্যার রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতেই নেপথ্যের কারিগরদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
জাতীয় চারনেতার প্রতি শির-অবনত শ্রদ্ধা।