আজ পতাকা উত্তেলন দিবস

আপডেট: মার্চ ২, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:২ মার্চ ১৯৭১ : পূর্ব বাংলার বেসামরিক প্রশাসন ভেঙ্গে খান খান হয়ে পড়লো। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলো। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণ, বঞ্চনা আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অসহযোগ। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলো। বাঙালি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বাদ রইল না। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একই চেতনার মহাজাগরণ দিকে দিকে সমুদ্র ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়তে লাগলো।

পতাকা উত্তেলন ঢাকাসহ সারা পূর্ব বাংলায় আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি হলো। দিকে দিকে দাউ দাউ করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠলো। রাজপথে উপচানো বিক্ষুব্ধ মানুষের জোয়ার। বিক্ষুব্ধ বাঙালিদের উপর গুলি চালাবার আদেশ অমান্য করে ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনতার সংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করলো। সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। এদিন সৈন্যরা বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলি চালায়।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাস পরিষদ ‘জিন্না সাহেবের পাকিস্তান, আজিমপুরের গোরস্থান’ স্লোগান দিয়ে প্রকাশ্যে সভায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন ঢাকা শহরে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ফার্মগেট এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। এতে অন্তত ৯ ব্যক্তি হতাহত হয়।

সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে ঐতিহাসিক বটতলায় হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী সমবেত হয়। চারিদিক থেকে মিছিল আসছে। স্লোগানে স্লোগানে আকাশ-বাতাস কেঁপে কেঁপে উঠছে। ‘জাগো, জাগো বাঙালি জাগো’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ ‘সবার কথা শেষ কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ পদ্মা- মেঘনা- যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ ঢাকা না পিন্ডি, ঢাকা ঢাকা’ ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যকার নানা স্লোগান।

পতাকা উত্তেলন ঐতিহাসিক এই ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসু সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন প্রমূখ।
বক্তরা বঙ্গবন্ধু মুজিবের নেতৃত্বে ও নির্দেশমত স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাবার শপথ গ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক এই সভাতেই প্রথম সবুজ পটভূমির উপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালী মানচিত্র সংবলিত স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, ডাকসু সহসভাপতি আসম আব্দুর রব। মুহূর্মুহ স্লোগানে দশ দিগন্ত প্রকম্পিত হয়ে উঠলো। কলাভবন চত্বরে হাজারো মানুষের শব্দ তরঙ্গের খই ফুটতে থাকলো।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পতাকাবাহী ািমছিল চলে যায় সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন, ‘পাকিস্তানিদের সাথে আর আমাদের কোনো সহযোগিতা নয়। যে যেখানে আছো সকল স্তরে পাঞ্জাবিদের একঘরে করে দাও। তবে হিংসার আশ্রয় নিয়ে নয়। বাঙালির হাত যেন বিদেশিদের রক্তে রঞ্জিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

১ মার্চ সারা রাত ধরে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে বাংলাদেশের পতাকাটি তৈরি করেছিলেন, কুমিল্লার ছাত্রনেতা ও চিত্রশিল্পী শিবনারায়ণ দাস। পতাকার নকশা রচনা করেছিলেন সিরাজুল আলম খান এবং বিশ্ববিদালয়ে এটিকে বহন করে এনেছিলেন চিশতি শাহ হেলালুর রহমান ও জাফর আলম। এরা দুজনেই ২৫ মার্চের রাতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল অভ্যন্তরে শহিদ হয়েছিলেন।

এদিন রাতে এক বেতার ঘোষণায় ঢাকা শহরে সান্ধ্য আইন জারি হয়। ঘোষণার পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। অসংখ্য সব জঙ্গি মিছিলের স্লোগান ছিলÑ ‘সান্ধ্য আইন মানি না’ ‘ জয় বাংলা’ বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।

ডিআইটি মোড়, মর্নিংনিউজ ও গভর্নর হাউসের সামনে এবং শহরের অসংখ্য স্থানে কার্ফ্যু ভঙ্গকারীদের ওপর পাকসেনারা গুলি চালায়। রামপুরায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করতে গিয়ে ফারুক ইকবাল নামের একজন শহিদ হন।