আজ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আপডেট: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বেদনাদায়ক দিন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় নিশ্চিত জেনে প্রথিতযশা ও খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালায় এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

আল-বদর প্রধান মতিউর রহমান নিযামীর নেতৃত্বাধীন বাহিনির জঙ্গি সদস্যরা বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। যাদের হত্যা করা হয়েছিল আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে তাদের কোনো রাজনীতি ছিল না, নির্বিরোধী, শান্ত। কিন্তু তাদের কী ছিল তা আমাদের চোখে পড়ে নি, ঘাতকদের চোখে তা ঠিকই পড়েছে। মানবিকতা যা মানুষের মূল ধর্ম। আর মানবিকতা সন্ত্রাস-সহিংস বিরোধী। সন্ত্রাস যাদের মূল ভিত্তি তারা মানবিকতার বিরুদ্ধে আঘাত হানবেই, হেনেছেও, এখনো হানছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালিদের মানবিকতার লড়াই। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাই ছিল এর মূল দর্শন। আর বুদ্ধিজীবীরা সবসময় সেই মানবিকতারই দিসারী, জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের নির্দেশক-অনুসারি- সর্বোপরি জাতির বিবেক।

পাকিস্তান বাহিনির এ দেশিয় দোসররা যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, বাঙালি নিধনযজ্ঞে, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে সমান অংশিদার, বিজয়ের ঠিক পূর্বমুহূর্তে তারা সদ্যজাত বাংলাদেশকে করতে চেয়েছিল মেধাশুন্য। পরিকল্পনা করে, তালিকা করে, বেছে বেছে নির্মমভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে ঘাতকচক্র। আল-বদর, আল-শামস আর রাজাকার বাহিনির সদস্যরা ক্ষুধার্ত হায়েনার মত বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে হাজির হয়েছে, মেধা আর মননের গন্ধ শুঁকে শুঁকে ধরে নিয়ে গেছে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আর ফিরে আসে নি তারা। তাদের প্রাণহীন দেহ পাওয়া গেছে রাজধানীর মিরপুরের বধ্যভূমিতে।

বুদ্ধি ও মেধা যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য, যাঁরা বাংলাদেশের উন্নত ভবিষ্যত রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো-তাঁদেরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যই হলো বাংলাদেশ যেন উঠে দাঁড়াতে না পারে। বাঙালিদের বিজয় যখন কোনোভাবেই আটকানো গেলো না তখনই জঙ্গি আল-বদর, রাজাকার দল অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড শুধু ১৪ ডিসেম্বরেই নয়- মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে এ হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। দেশের সর্বত্র এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এ দেশিয় ঘাতক-দালালদের চিহ্নিত করা যায়নি। সময় এসেছে বৃদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করা। এ লক্ষে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিশন গঠন করে পুরো দেশ জুড়ে যে বৃদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সেই ঘাতকদের চিহ্নিত করা।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে এ দেশীয় মূল কুচক্রি মতিউর রহমান নিযামী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিভিন্ন দেশে পলাতক খুনিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকরের অপেক্ষায় আছে জাতি। এ ব্যাপারে সরকারের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চাই।
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির সকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধাঞ্জলি।