আলোচিত দুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেই অগ্রগতি II ‘পড়ে গিয়ে মৃত্যু’ আ’লীগ কর্মী নয়নালের

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহীতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই চিকিৎসককে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনার সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সাদা রঙের গাড়িরও কোনো হদিস নেই। এখনো রহস্যঘেরা রয়েছে দুই চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সন্তুষ্ট নয় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। ন্যায়বিচার নিয়ে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সংশয়।

দুই এদিকে আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নাল উদ্দিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। তিনি পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, পড়ে গিয়ে মারা গেছেন আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নাল উদ্দিন। এটা দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলা হচ্ছে। তারপরও আমরা তদন্ত করছি। তাকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে কিনা সেটাও তদন্ত করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, থিম ওমর প্লাজা থেকে আমরা মূল দুই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাইনি। এই ক্যামেরা দুটি নাকি নষ্ট। অন্য কয়েকটি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়া হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের অন্তত তিন-চার দিন আগে নয়নালের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের অন্তত সাত দিনের ফুটেজ বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে। তাতে সময় লাগছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, মূল দুটি সিসি ক্যামেরা আসলেই নষ্ট ছিল, নাকি নষ্ট করা হয়েছে, তা জানতে ডিভিআর জব্দ করেছি। সেটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এ ছাড়া আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি, সেগুলো ধরে এবং মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ে অন্য সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে এমন কয়েকজনকে আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে ধরছি। তাদের নজরদারিতেই রাখা হয়েছে। তবে একেবারেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেই কাউকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি।

অক্টোবরে শেষে মধ্য রাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় গোলাম কাজেম আলী আহমদকে (৪২)। তিনি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখতেন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪২তম এমবিবিএস ব্যাচের ছাত্র ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার আরেকজনের নাম এরশাদ আলী দুলাল (৪৫)। তিনি গ্রাম্য চিকিৎসক ছিলেন। তিনি হোমিও চিকিৎসাসেবাও দিতেন। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ কচুয়াতৈল এলাকায়। তিনি জমি কেনাবেচার কাজ করতেন বলে জানান তার স্বজনরা।

রাজশাহী মহানগরীতে নগরবাসীর জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে নগরজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের পাঁচ শতাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। অথচ গেল ৩০ অক্টোবর ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমদ চেম্বারে রোগী দেখা শেষে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালের একজন মেডিকেল রিপ্রেজেটেন্টিভের মোটরসাইকেলে চড়ে উপশহরে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। বর্ণালি মোড় এলাকায় মোটরসাইকেলটি পৌঁছলে একটি মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। এরপর মাইক্রো থেকে তিনজন নেমেই ডা. কাজেমের মাথায় আহত করে। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা তার বুকের বামপাশে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাতেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই দিন চার ঘণ্টা আগে নগরীর কৃষ্টগঞ্জ বাজারে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে চেম্বার থেকে পল্লিচিকিৎসক এরশাদ আলীকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এর ঘণ্টাখানেক পর রাস্তায় মেলে তার লাশ। একই দিনে আলোচিত ২ চিকিৎসক হত্যার ঘটনা সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেই। এখন পর্যন্ত কাউকে আটকও করতে পারেনি।

নিহতর স্বজনরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাই ক্ষুব্ধ তারা। সন্ধিহান ন্যায়বিচার নিয়েও। এরশাদ আলীর মা কুমকুম বিবি বলেন, ‘আমরা মনে করছি খুনিদের সঙ্গে ক্ষমতাশালীদের আঁতাত রয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আমরা ন্যায় বিচার পাব না।’

এ বিষয়ে ডাক্তার কাজেম আলীর স্ত্রী ডা. ফারহানা ইয়াসমিন সোমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে দুই চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনো রহস্য অধরা। ফলে শঙ্কিত চিকিৎসক সমাজ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো. নওশাদ আলী, আমরা সব জায়গায় গেছি, রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করেছি। আলটিমেটামও দিয়েছি। সবাই আমাদের বলেছেন আন্দোলনের দরকার নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আসামি দ্রুত ধরা পড়বে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি। তার মতো একজন চিকিৎসক খুন হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য আতঙ্কের।

চিকিৎসক এরশাদ আলীর মামলা নিয়ে কাজ করছে মহানগর পুলিশ। আর ডা. কাজেম আলীর মামলা নিয়ে কাজ করছে পিবিআই। দুটি সংস্থা বলছে, তারা কাজ করছে। যদিও এর অগ্রগতি নিয়ে মুখ খুলতে চান না তারা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, দুজন স্বনামধন্য লোক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি যেন বিশদভাবে অনুসন্ধান হয় সে জন্য মামলাটি পিবিআইকে দেওয়া হয়েছে। অন্য মামলাটি মহানগর পুলিশ তদন্ত করছে।

রাজশাহী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত এককভাবে কিছু বলার মতো পর্যায়ে আসেনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ