বাল্যবিয়ে-সর্বোচ্চ দেশগুলোর কাতারে বাংলাদেশ

আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

এ কলঙ্ক মুছতেই হবে

অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের নজর কেড়েছে। অনেক দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবেও মানছে। এমডিজির সাফল্য রেখা পেরিয়ে এএসডিজি বাস্তবায়নে সফলতায় আস্থাও রাখছে বাংলাদেশ। সামাজিক অনেকগুলো সূচকে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিন্তানের চেয়েও এগিয়ে আছে। নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পচির্যায়, শিশু মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দেশে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশের হতাশাজনক চিত্রই ফুটে ওঠে। বাল্যবিয়ে জাতির জন্য লজ্জারও।

ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেন যৌথভাবে একটি মেটা-বিশ্লেষণের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; তাতে বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। বিশ্লেষণে যেসব দেশে বাল্যবিয়ের হার সর্বোচ্চ, সে দেশগুলোর কাতারে এখনো বাংলাদেশ রয়ে গেছে। যেখানে ২২ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের অর্ধেকের বেশির বিয়ে হয়েছে যখন তারা শিশু ছিলেন। এটা খুবই বেদনাদায়ক ব্যাপার যে, পাকিস্তানের মত উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশটির চেয়ে বাংলাদেশের বাল্যবিয়ে পরিস্থিতি অবনতি পর্যায়ে রয়েছে।

বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো- ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক এবং ট্রমা-অবহিত সেবা নিশ্চিত করা। এ পদ্ধতিটির মাধ্যমে নারী ও শিশু, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা সহজে ও বিনা সঙ্কোচে সহায়তা চাইতে পারবে; আর এভাবে শিশুবিয়ে, পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার (জিবিভি) ক্ষতিকর প্রথাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এটার বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশে নারী শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষার ব্যাপারে প্রশ্ন আছে। নারী শিক্ষার এই বিকাশমান ধারায় বিজ্ঞানমনস্কতার স্পষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক ভয়-আতঙ্ক, কুপমণ্ডকতা, হীনমন্যতা থেকে মেয়েরা বেরিয়ে আসতে পারছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে- যা তার বাকি জীবনকে দু্ির্বসহ করে তুলছে, নির্ভরশীল করে তুলছে।

ইউএন উইমেনের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে এরই প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন যে তারা নিজেরা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার (ভিএডব্লিউজি) শিকার হয়েছেন অথবা অন্য এমন নারীকে তারা চেনেন, যিনি এর শিকার হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতাও বড় প্রতিবন্ধকতারূপে দেখা যাচ্ছে।

নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে দ্রুত ও কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে। যা কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোর ফাঁকফোকরগুলোর ব্যাপারে আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা শুধু কথার কথা হলে চলবে নাÑ এটা নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্র-সমাজে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বাধ্যবিয়ের কলঙ্ক থেকে বাংলাদেশকে অবশ্যই মুক্ত করতে হবে।