সোনার দেশের তের বছর পূর্তি পাঠকের ভালবাসা ও পরামর্শে উজ্জীবিত আমরা

আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

বিশেষ সম্পাদকীয়


আজ খ্রিস্টাব্দ দু’হাজার চব্বিশের প্রথম দিন- নববর্ষ। আজ থেকে তের বছর আগে দু’হাজার এগারো সালের এই দিনটিতে দৈনিক সোনার দেশ-এর নতুন করে যাত্রার সূচনা হয়। কালের পরিক্রমায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী এই পত্রিকাটি নতুন করে যাত্রা শুরুর পর পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাস সযত্নে সকৃতজ্ঞ ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। নিখাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন সম্পাদকীয় নীতি সোনার দেশ নিষ্ঠা ও সততার সাথে অনুসরণ করে চলেছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে, রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের হাসি-কান্না বেদনার সাথে একাত্ম হয়ে, নারী ও শিশুর স্বার্থ-সমর্থনে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার সুরক্ষার লড়াইয়ে সোনার দেশ তার সততা, সাহস ও দৃঢ়-শপথের অভিযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এটা দেশের গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণমানুষের আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন সোনার দেশে।

সোনার দেশ আজ গৌরবময় পথচলায় চৌদ্দতম বছরে যাত্রা শুরু করলো। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর সোনার দেশ তার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের ভালবাসায় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই পথচলার সময়টা মোটেও মসৃণ ছিল না। বারবার বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, হোঁচট খেতে হয়েছে- এখনো হোঁচট খেতে হচ্ছে। এটাও চলার এক জীবনঘনিষ্ঠ দর্শন-অতিক্রম্যবোধ। পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও নিবিষ্ট- নিঃশর্ত সমর্থনের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সোনার দেশ এগিয়ে চলেছে।
২০২০ ও ২০২১ সালটাও বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জন্যই চ্যালেঞ্জের ছিল। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের থাবা থেকে বাংলাদেশও রেহায় পাইনি। উন্নয়নের সব খাতেই মারাত্মক প্রভাব পড়ে। মানুষের জীবন জীবিকায় স্থবিরতা নেমে আসে। দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো করোনার থাবা থেকে মোটেও মুক্ত ছিল না।

অর্থনৈতিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়েই এখনো গণমাধ্যমকে চলতে হচ্ছে। অথচ গণমাধ্যমকর্মিদের প্রথম সারির করোনাযোদ্ধা হয়ে কাজ করতে হয়েছে। দৈনিক সোনার দেশও করোনা ভাইরাসের থাবায় পড়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু পাঠকদের উৎসাহ এবং সাংবাদিক-কর্মচারীদের সাহসে বলীয়ান হয়ে সোনার দেশ তার যাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাধ্য হয়েই, শুধুমাত্র টিকে থাকার প্রশ্নে সোনার দেশ-এর কলেবর ৮ পৃষ্ঠা থেকে চার পৃষ্ঠায় আনতে হয়েছে। আট পৃষ্ঠায় ফেরার আকুলতা প্রবল। কিন্তু জাতীয় ও বিশ্ব বাস্তবতায় সংবাদপত্র শিল্প অব্যাহতভাবে হোঁচট খাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের প্রভাব,. রাজনৈতিক টানাপোড়েন বিশ্ব অর্থনীতিকেই টালমাটাল করে তুলছে। এ সব কিছুর নেতিবাচক প্রভাব দেশের রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি করছে।

এসব সমস্যা-সঙ্কট সংবাদপত্র শিল্পকে বেকায়দায় ফেলেছে। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম শিল্পও সংবাদপত্রের টিকে থাকার জন্য অবশ্যই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তদুপরি সংবাদপত্রের অবসান হয়ে গেছে এমন কথা বলার সময় আসেনি। পাঠকের ভিন্নতার কারণেই সংবাদপত্র ঠিকে থাকবে।

আঞ্চলিক সংবাদপত্র হিসেবে সোনারদেশ কে নানামাত্রিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই মাত্রা ছাড়িয়েছে কাগজের দাম। সেই সাথে এ শিল্পে আর সব উপকরণের মূল্য বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞাপনের বাজার যেমন সঙ্কুচিত হয়েছে তেমনি এই বাজারে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে ব্যাপকভাবে। এটা সুষ্ঠু ধারার সংবাদপত্রের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি। পাঠকগণ আছেন, বিজ্ঞাপনদাতারা আছেন-তারাই সংবাদপত্রের ভরসার জায়গা। নিশ্চিত এ চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে সোনার দেশ পরিবার।

কঠিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ব্রত নিয়েই সোনার দেশের পথচলা। সেই আবেগ, সেই প্রত্রিশ্রুতি, সেই সাহস অটুট আছে- যেমন সূচনায় ছিল। দৃঢ়তর সেই অঙ্গীকার আগামীতেও থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উদ্ভাস, বহুত্ববাদী দর্শনের প্রতি নিবিড় আস্থা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং নারী ও শিশুর অধিকারের লড়াইয়ে সোনার দেশ সবসময় অগ্রসর ভাবনার একটি দৈনিক। জনগণের শক্তির সাথে, তাদের হৃদয়ের সুরের সাথে সোনার দেশের যে রাখিবন্ধন- তাই সোনার দেশকে রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ দৈনিকের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। সোনার দেশ পরিবার সত্যিই গর্বিত।

পথচলার তের বছরে অনেকের অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শে আমরা ঋদ্ধ হয়েছি। সীমিত সামর্থের মধ্যেও ওইসব পরামর্শ কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিপালন করার চেষ্টা করেছি। আমরা আরো পরামর্শে নিজেদের ঋদ্ধ-উদ্ভাসিত করতে চাই। ভালোর তো কোনো শেষ নেই। আমরা সব ভালোর সাথে, সর্বক্ষণ থাকতে চাই।

সীমাবদ্ধতা খুবই স্বাভাবিক, সোনার দেশ প্রকাশনার ক্ষেত্রেও তা ছিল। বর্তমান করোনাকালে সীমাবদ্ধতা আরো প্রকট হয়েছে। সোনার দেশ পরিবারের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা, সামর্থ-সাহস ও সততাই কর্মের উদ্দীপনাÑএমন ব্রত যাদের তারা বিজয়ীই হয়। পথ কণ্ঠাকীর্ণ হয়েছে বলে সোনার দেশের পথচলা থেমে থাকেনি। এই সাহস ও অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা- সবই পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে পাওয়া। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্যই সোনার দেশ-এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। এই আস্থার বন্ধন, শক্তি ও সাহসের সঞ্চালন আগামীতে অটুট থাকবে- সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।

আমরা কৃতজ্ঞ সোনার দেশের পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে। চতুর্দশ বছরের পথচলার শুরুতে আবারো সেই অঙ্গীকার, সেই প্রত্যয়ের ঘোষণা দিচ্ছি- সূর্যটা উঠেছে। সোনা রোদে আঙিনা ভরে আছে আলোয় আলোয়, শক্তির উদ্বোধনে, জীবনের আমন্ত্রণে। এ আমন্ত্রণে পথের দিশা আছে, জীবনের জয়গান আছে, স্বপ্ন-ভালোবাসা- শান্তি আছে। দুর্যোগ আসে কাটবে বলেই।

প্রিয় পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভান্যুধায়ীদের রাজশাহী অঞ্চল তথা দেশকে এগিয়ে নিতে সোনার দেশের নবযাত্রার চতুর্দশ বছরের সূচনায় সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
খ্রিস্টিয় নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।