স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন’র ইফতার মাহফিল, ছড়িয়ে যাচ্ছে সম্প্রীতি

আপডেট: এপ্রিল ১০, ২০২৪, ১২:০৯ অপরাহ্ণ


মো. সোহাগ আলী, রাবি প্রতিনিধি:পবিত্র মাহে রমজানের ২৯তম দিনের পড়ন্ত বেলা। তিন গ্রামের বিভিন্ন মতাদর্শের ছোটো-বড় শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনে খুব দামি কিছু না থাকলেও সবার মনে উচ্ছ্বাস। একইসঙ্গে বসে আছে সবাই। সবার সামনে একই রকম ইফতারি। সৃষ্টি হচ্ছে সহাবস্থান, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি। বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশনের ইফতার আয়োজনের কথা।

উপজেলার রামনগর, বেশিনগর ও নওদাকুর্শা গ্রামের ছাত্র ও যুব সমাজকে নিয়ে গঠিত স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন। স্বপ্নের সোনার মানুষ গড়ায় সংগঠনটির উদ্দেশ্য। বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্রকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি প্রতিবছর ২৯ রোজায় ইফতার মাহফিল আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি। সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান সদস্য, তিন গ্রামের ছাত্র ও যুবসমাজ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা অংশগ্রহণ করে এতে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও সংগঠনটি বাস্তবায়ন করেছে তাদের এই অসামান্য উদ্যোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) আসরের নামাজের পর থেকে পূর্বনির্ধারিত বেশিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকে আমন্ত্রণপ্রাপ্তরা। ইফতারের পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান সদস্যরা। এসময় তিন গ্রামের বিভিন্ন বয়সের শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিনুর বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুল হক বিশ্বাস। প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন মিটন আল ফালাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের পরিচালক মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শংকরদিয়া কলেজের প্রভাষক সাহাঙ্গীর হোসেন, কুর্শা ইউনিয়নের ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম রুনা, ছাতিয়ান ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের মেম্বার ও স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম, ছাতিয়ান ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম দুলাল (মেম্বার), ছাতিয়ান ইউনিয়ন জাসদের সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক জোয়ার্দার, আনারুল করিম ও হাবিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শোন্দহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামাল হোসেন, মাজিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোজগার আলীসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ফাউন্ডেশনের সাবেক ও বর্তমান সদস্য এবং তিন গ্রামের যুবসমাজের একাংশসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলুল হক বিশ্বাস বলেন, হাদিস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি পুরো রমজান মাস পাওয়া সত্ত্বেও নিজের গুনাহ ক্ষমা করে নিতে সক্ষম হলোনা, তার মত হতভাগা আর নেই। তাই, রমজান মাসের রোজাসহ সকল ইবাদতগুলো যথাযথভাবে পালন করা আমাদের জন্য জরুরি ছিল। এবার আমরা কে কতটুকু সেটা পালন করতে পেরেছি, জানিনা। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আগামীতে আমরা এবিষয়ে আরো সচেষ্ট হবো, ইনশাআল্লাহ।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, একটি হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস বাড়ার সাথে সাথে এর ফজিলতও বাড়তে থাকে’। কিন্তু আমাদের কি দুর্ভাগ্য যে, রমজান মাসের ফজিলত বাড়ার সাথে সাথে মসজিদের মুসল্লী সংখ্যা কমতে থাকে। আমরা উল্টো চলছি। এটা সংশোধন করতে হবে। রমজানের শেষেও নামাজ পড়তে হবে। নামাজ শুধু একটা মাসের জন্য না। জীবিত থাকা পর্যন্ত নামাজ ছাড়া যাবেনা।

সভাপতির বক্তব্যে স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সেলিনুর বিশ্বাস বলেন, ইফতারের এমন আয়োজন সবার মধ্যে সৌহার্দ্য তৈরি করে। রমজান মাস সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক অনন্য সুযোগ। ইফতারের সময় খাবার ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসায় আবদ্ধ হন ইফতারকারীরা। এই উদ্দেশ্যগুলো সামনে রেখেই আমাদের এই আয়োজন। তিন গ্রামের বিভিন্ন মতাদর্শের অনেকেই এক জায়গায় বসে ইফতার করছে, সম্প্রীতি সৃষ্টি হচ্ছে। এটা একটা ইতিবাচক বিষয়। এর মাধ্যমে তিন গ্রামের সবাই উপকৃত হবে আশা করি।

উল্লেখ্য, কিছু যুবকের হাত ধরে স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সংগঠনটির কার্যপরিধি হলো- সমাজ ও ছাত্রকল্যাণ, স্বাস্থ্যসেবা, ক্রিড়া, রক্তদান ও জনসচেতনতা সৃষ্টি। তাদের স্লোগান- শিক্ষা, শক্তি, উন্নয়ন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ