স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা

আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

 

গোলাম কবির:প্রাণী-মাত্রই শৃংখলে আবদ্ধ থাকতে চায় না। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আরবিতে তাকে বলা হয় ‘আশরাফুল মাখলুকাত।’ সুতরাং মানুষ কেন শৃংখলে বদ্ধ থাকবে। মানব চেতনার আবহমান এই অভীপ্সাকে রুদ্ধ করা কী সহজ!

একদা বাহুবলে মানুষ হত্যা করেছে কিছু বাহুবলী’ সাধারণ মানুষকে। সে মানুষ ছিলো মূঢ়। তারপর আদর্শের তকমা এঁটে মানুষকে বিভ্রান্ত করে অসির জোরে মানুষকে পশুর মত ব্যবহার করেছে। সেদিন বাকী না থাকলেও কত ছল-চাতুরি প্রয়োগ করে মানুষকে ভোঁতা করে রাখা হয়েছে। আমরা কখনো শক্তির কাছে, কখনো আদর্শের নামে স্বার্থলিপিতে আবদ্ধ থেকে স্বাধীনতাকে তুচ্ছ করে ব্যক্তির সান শওকত বাড়িয়ে সুখে থাকার ভান করেছি টেকেনি সেই আদর্শের প্রতাপ।

আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিলাম দীর্ঘ সময়। নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে। আমাদের রক্ষা করতে কেউ আসেনি। বৃটিশ অধিকৃত ভারতকে ধর্মের নামে ভাগ করে আমাদের ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি সেই আমি পেশিশক্তির স্বাধীনতার ফল। দেখেছি, ‘কারো পানে ফিরে চাহিবার নাই যে সময়।’

স্বাধীনতার জন্য আঠারো শতক থেকে আমাদের দূরদর্শী নায়করা আমাদের সচেতন করতে চেয়েছেন। আমরা মর্ম বুঝিনি। বৃটিশদের ‘ডিডাইড এন্ড রুল পলিশি’ আমাদের কিঞ্চিৎ জাগ্রত করেছে। আমরা সচেতন হতে শুরু করেছিÑকখেনো স্থূল দৃষ্টিতে কখনো আবার ধর্মের পার্থক্যের আবরণে ব্যক্তিস্বার্থ পূরণের অভিপ্রায়ে।

‘বঙ্গবন্ধু ‘মানুষে মানুষে মিলনে আমাদের জন্ম’তে বিশ্বাস চেয়ে ছাত্রাবস্থা থেকে মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োগ করেন। ধর্ম নয়, নয় কোনো মতবাদ, নিছক মানব মুক্তিই ছিলো তাঁর মূল স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা। ৪৭-এ দেশ ভাগের পর বুঝেছিলেন, আমাদের গর্হিত চিন্তা। বঙ্গবন্ধুর নিঃস্বার্থ খালি হাতের আহ্বানে বাংলার মানুষ নিঃশর্ত সাড়া দিয়েছে। অঢেল রক্তের দামে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সে রক্ত বিসর্জনের ইতিহাস আমাদের কি শিক্ষা দিয়েছে! আমরা নানা ছলে শক্তির পদপ্রান্তে পড়ে আবার নিজেদের চেতনাকে দাসত্বের কাছে বিক্রি করছি। এটা বোধকরি স্বাধীনতা নয়।

মুক্তিযুদ্ধে সশরীরে দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে অংশ নিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ মানসিক প্রস্তুত ছিলেন দখলদার পাকিস্তানিদের পরাজিত করতে। লক্ষ্য কিন্তু সাময়িক নয়, একটা জাতি গড়ে উঠবে, যেখানে মানুষে মানুষে মিলনে অন্তরায় হবে না বিত্ত কিংবা মতবাদ। মনে আছে নোয়াখালিতে সরকারি কলেজের আমি নবীন শিক্ষক। চলাচলের পথ বন্ধ। সময় কাটে এর ওর বাসায়।

জুলাই মাসে যুদ্ধ চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের মনাকশার জামাই। আছেন একসময়ের মুসলিম লীগ নেতা। তিনি বলে উঠলেন, ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ দখল করে নিলেই আমরা আবর্জনা মুক্ত হতাম। এটা তাঁর দূরদর্শী বিশ্বাস ছিলো না। এটা আরো কত ভয়াবহ হতো তা তিনি হয়তো বুঝতেন না। যেমন পাকিস্তান থেকে চলে আসা অনেকে মুক্তিযুদ্ধ স্থগিত করে ভাঙনে জোড়া দিতে কৌশলী হয়েছিলো। এটাও যে অবাস্তব তা অনেকেই বুঝে না। যাই হোক. আমরা আমাদের বহুত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি।

যারা দীর্ঘসময় ধরে গাছেরটা আর তলারটাও লুট করেছে অথচ স্বার্থসিদ্ধি হয়নি, তারা বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতার নেতাদের হত্যা করে একটা বিভীষিকা সৃষ্টি করেছে। অঙ্কুর থেকে এখন মহীরূহে আমরা। কেউ মহিলাদের দিয়ে ধর্মের নামে উঠান বৈঠক করে আবার অনেকে গণতন্ত্রের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আমাদের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে রত। আমরা নির্বোধ কিংবা নির্জীব নই। সুতরাং আমাদের স্বাধীনতাকে ভ্রষ্ট হতে দিতে চাই না। আমাদের এই স্বাধীনতাকে কতিপয় কুচক্রী বিপথে নিয়ে যাবার নানা চক্রান্তে লিপ্ত। আমরা সদা জাগ্রত থেকে কুচক্রীদের মোকাবেলা করবো। কেবল হালুয়া রুটির জন্য নয়, আত্মমর্যাদা রক্ষার কাতারে দাঁড়িয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর করবো ‘জয় বাংলা’। বাংলার জয় হোক।

জয় বাংলা নিয়ে চক্রান্তের শেষ আজও হয়নি। ভাষা নিয়ে এখানে চক্রান্ত হাজার বছরের। আমরা সব চক্রান্তের মূল উৎপাটন করতে পারিনি। বিশ্বাস রাখি অচিরেই তার উৎখাত হবে। আমাদের প্রাণের স্বাধীনতায় আমরা যোগ্যতার ভিত্তিতে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবো। বলবো স্বাধীনতা! আমার স্বাধীনতা!!
লেখক: সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ