রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রর ৯৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এই কীর্তিমান ঐতিহাসিক পরলোক গমন করেন।
ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রয় ১৮৬১ সালের ১ মার্চ কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মথুরানাথ মৈত্রেয়, মাতার নাম সৌদামিনী দেবী। মৈত্রেয় পরিবারের আদি বাস ছিল রাজশাহীর গুড়নই গ্রামে। নানা কারণে মথুরানাথ কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে কাঙাল হরিনাথের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তাঁর। অক্ষয়কুমারের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কাঙাল হরিনাথের কাছে।
অক্ষয়কুমারের মাতা সৌদামিনী দেবী রাজশাহীর স্বনামখ্যাত আইনজীবী বৈদ্যনাথ বাগচীর কন্যা ছিলেন। সেই সূত্রে পুত্রের লেখাপড়ার বিষয় বিবেচনা করে মথুরানাথ রাজশাহীতে আসেন ওকালতি পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছায়। সে বছর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় পরীক্ষা দিতে না পারলেও রাজশাহীর দেওয়ানি আদালতে একটি সরকারি চাকরি পেয়ে যান। ফলে, রাজশাহী-বাস পাকাপোক্ত হয়।
অক্ষয়কুমার ১৮৭১ সালে বোয়ালিয়া সরকারি স্কুলে (বর্তমান কলেজিয়েট স্কুল) ভর্তি হন। এখান থেকে ১৮৭৮ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন এবং রাজশাহী বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৮০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফ.এ. (ফার্স্ট আর্টস) পাশ করেন এবং এবারেও রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে বি.এ. পাশ করেন। অসুস্থতার কারণে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ না করেই তাঁকে রাজশাহী ফিরে আসতে হয়। ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বি.এল. পাশ করে ওই বছরই আইনজীবী হিসেবে রাজশাহী আদালতে যোগ দেন।
অক্ষয়কুমারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজ হলো, রাজশাহী শিল্প-বিদ্যালয় (ডায়মন্ড জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল) প্রতিষ্ঠা। তিনি পাঁচ বছর কাল এই বিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য কীর্তির মধ্যে আরও রয়েছে, ‘ঐতিহাসিক চিত্র’-এর সম্পাদনা, পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনা এবং ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালন।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়-র সবচেয়ে সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘সিরাজদ্দৌলা’Ñ বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে ইংরেজ ঐতিহাসিকরা যে সমস্ত মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁর চরিত্রকে কলঙ্কিত করেছেন তা নানা গবেষণা ও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে অক্ষয়কুমার অপনোদন করেন। ‘সিরাজদ্দৌলা’ গ্রন্থ পড়ে রবীনদ্রনাথ ঠাকুর মন্তব্য করেন, ‘‘বাঙ্গালা ইতিহাসে তিনি (অক্ষয়কুমার) যে স্বাধীনতা যুগ প্রবর্তন করিয়াছেন সেজন্য তিনি বঙ্গ-সাহিত্যে ধন্য হইয়া থাকিবেন।’’ শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ এও বলেন, ‘আধুনিক বাঙ্গালী ইতিহাস-লেখকগণের তিনি শীর্ষস্থানীয়’।