অতিদারিদ্র্য কমে ১২.৯ শতাংশ।।বাংলাদেশ সঠিক পথেই

আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০১৬, ১১:৪৮ অপরাহ্ণ

বর্তমানে বাংলাদেশে ‘অতিদরিদ্র’ মানুষের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠির ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এটি বিশ্ব ব্যাংকের দেয়া তথ্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় এমন সাফল্য। বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগুচ্ছে এ তারই সূচক। ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি) বাংলাদেশের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের (১১৫ টাকা) কম। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিশ্ব ব্যাংক গত অর্থবছরে অর্জিত ৭.১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ভিত্তি ধরে তারা অতিদারিদ্র্যের হার হিসাব করেছেন। বিশ্ব ব্যাক বলছে, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়। এমনিক ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়েও ভালো।
২০০৫ সালে বাংলাদেশে হতদারিদ্র্যের হার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল বলে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়। অর্থাৎ এক দশকের কিছু বেশি সময় নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রশংসনীয়। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে ৩১ শতাংশের বেশি মানুষকে হতদারিদ্রের ওপরে নিতে সক্ষম হয়েছে। এটি নিয়ে কূটতর্ক করার অবকাশ কেউ তৈরি করতেই পারেন কিন্তু বাস্তবিক নিরীখে অগ্রগতির গ্রাফটা বেশ পরিষ্কার। আর তথ্যটি বাংলাদেশের কোনো সংস্থ্য দিচ্ছে নাÑ স্বয়ং বিশ্ব ব্যাংক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ‘শূন্যে’ (৩ শতাংশের নিচে নেমে এলেই তাকে শূন্য ধরা হবে) নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে বলে বিশ্বব্যাংকের মুথপাত্র জানিয়েছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ বলছে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে হবে না।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি সহ নানা সূচকে বিশ্বের নজর কেড়েছে। এ দেশকে যারা বন্যা, খরা, ভিক্ষুকের দেশ কিংবা ‘তলাবিহীন ঝুরির’ দেশ বলেÑ নানা কূটক্তি, অবজ্ঞা ও উপহাস করতে অভ্যস্ত ছিল তাদের জন্য বাংলাদেশ যোগ্য জবাব দিতে পারছে। তবে আমাদের মত উন্নয়নকামী দেশগুলোর রাজনীতিতে দরিদ্র মানুষের বেশ উপযোগিতা আছে। অর্থাৎ ভোটের রাজনীতিতে দরিদ্র মানুষকে প্রভাবিত করে ভোট নিজ দলের অনুকুলে নেয়ার নানা কৌশল লক্ষনীয়। সে হিসেবে বলা যায় ভোটের রাজনীতিতে দরিদ্ররা নির্বাচনকালে বেশ গুরুত্ব লাভ করে। বাংলাদেশ দারিদ্র বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে একটি পর্যায় পর্যন্ত দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন নাও থাকতে পারে।

 

উল্লেখযোগ্য হারে দেশের জনসংখ্যায় উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা সংখ্যাগরিষ্ট হলে দরিদ্র মানুষ ভোটের রাজনীতিতে তাদের উপযোগিতা হারাতে পারে। সেটা হবে শেষ দরিদ্রাংশের জন্য বিপজ্জনক। রাজনীতিতে তাদের নিয়ে ভাবার যৌক্তিকতা হারাতে পারে। বাংলাদেশকে আমরা সেই ব্যতিক্রম রাষ্ট্র হিসেবে পেতে চাই যে,  কোনো অবস্থাতেই দরিদ্র মানুষ যেন রাজনীতি ও উন্নয়ন ভাবনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে। সবাইকে নিয়ে, সবার জন্য উন্নয়নের ধারণাটা সর্বশেষ দরিদ্র ব্যক্তিকে ওপরে নেয়ার সদিচ্ছার মধ্যেই যেন রাজনৈতিক অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়Ñ এই প্রত্যাশা রইল।