মাহাবুল ইসলাম
‘স্বল্প সময়ে অধিক লাভ’- কৃষি আবাদে এমন প্রসঙ্গ আসলেই আসে কপি চাষের নাম। তবে লাভ যেমন অধিক তেমনি লোকসানের কবলে পড়লে ক্ষুদ্র কৃষকের উঠে দাঁড়ানোর শক্তিও কমে যায়। একারণেই এ আবাদকে অনেকেই বড় লোকের আবাদ হিসেবেও গণ্য করে থাকেন। কিন্তু লাভ যেহেতু বেশি তাই ঝুঁকি নিয়েই বাড়তি লাভের আশায় এ আবাদে ঝুঁকছেন চাষীরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কপির আবাদ রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চাষীরা বলছেন, কপির আবাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়ে থাকে খরিপ-২ এর সময়ে কপি রোপন করলে। এই সবজি শীতের শুরুতেই বাজারে সরবরাহ করা যায়। এতে দাম থাকে খুবই চড়া। ভালো আবাদ নিয়ে শীতের শুরুর বাজার ধরতে পারলেই বিঘাপ্রতি কৃষকের লাভ থাকে প্রায় লাখ টাকা। যা অন্য আবাদে কৃষকরা কল্পনাও করতে পারেন না।
রাজশাহীর পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, উঁচু প্রকৃতির প্রায় সব জমিতেই এখন কৃষকরা কপির আবাদ করছেন। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ চারা রোপন করছেন। আবার কারও চারা এরইমধ্যে বড় হতে শুরু করেছে। চলছে পরিচর্যার কর্মযজ্ঞ।
চাষীদের ভাষ্যমতে, কপির আবাদ সব কৃষক করতে পারে না। এ আবাদ করতে যেমন খরচ বেশি লাগে, তার চেয়ে বেশি লাগে আবাদ সর্ম্পকে গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। যার অভিজ্ঞতা যত বেশি, সে তত ভালো আবাদ করতে পারে। কপি’র পরিচর্যা অনেকটা ছোট্ট বাচ্চার মতোই করতে হয়। একটু ভুল হলেই পুরো আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। আবার প্রতিকূল পরিবেশে গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপও নিতে হয়। এ আবাদ যেমন লাভজনক, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও। তবে যেহেতু আবাদ ভালো করতে পারলেই মোটা অঙ্কের লাভের মুখ দেখা যায়, একারণে কৃষক এ আবাদকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার কপি চাষী ইব্রাহিম আলী বলেন, হঠাৎ করেই যে কোন কৃষক ধান বা অন্য সবজির আবাদগুলো করতে পারে। কিন্তু কপির আবাদ করতে হলে তার পূর্ব বেশকিছু প্রস্তুতি থাকা লাগে। মাত্র তিন মাসের আবাদ হলেও বিঘাপ্রতি কপি চাষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আবার আবাদ করতে না পারলে পুরো টাকায় ‘জলে’ যাবে। আমি গত ৫-৬ বছর ধরে কপি চাষ করছি। এরমধ্যে দু’বার লোকসানের মুখে পড়েছি। আর তিন-চারবার লাভবান হয়েছি। এখানে মূলত আবাদ করতে পারলেই মোটা অঙ্কের রিটার্ন আসে, আর এখন কৃষিও বাণিজ্যিক রূপ পাচ্ছে। সব বিবেচনায় এ আবাদের প্রতি আগ্রহ বেশি।
আরেক চাষী আবু সাঈদ বলেন, আমি ২২ কাঠা জমি তিন বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। তবে আমার মূল টার্গেট কপির আবাদ। আবাদ করতে করতে এখন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। গত দু’তিন বছরে লোকসানের মুখে পড়তে হয় নি। আর আমাদের একটা প্রতিযোগিতা থাকে যে, এই কপি কে কত দ্রুত বাজারজাত করতে পারবে। কারণ শীতের শরুর প্রথম ১০-১৫ দিন দাম ভালো থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে দাম নামতে থাকে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খরিপ-২ এর কপি সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই রোপন করা হবে। এখন পর্যন্ত ২৭৮ হেক্টর জমিতে ফুলকপি এবং ২১৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি রোপন করা হয়েছে। গত বছর খরিপ-২ মৌসুমে রাজশাহীতে ফুলকপির আবাদ হয়েছিলো ৩৮৭ হেক্টর এবং বাঁধাকপি ৩২৩ হেক্টর জমিতে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসা. উম্মে ছালমা বলেন, আশা করছি, এবার গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হবে। কারণ কৃষকের কাছে কপির আবাদ বেশ জনপ্রিয় হচেছ। উত্তরোত্তর এ আবাদ বাড়ছে। আর যেহেতু কপি আবাদ মূলত উঁচু জমির আবাদ। বৃষ্টির কারণে কোন ক্ষতির আশংকা নাই। আর খরিপ-২ এর আবহওয়ার উপযোগী বীজ উদ্ভাবন হওয়ায় কৃষকদের ঝুঁকিটাও অনেকটা কমেছে।