নিজস্ব প্রতিবেদক ও রাবি প্রতিবেদক:
কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত রেলপথ অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকার রেলপথ অবরোধ শুরু করেন তারা। চার ঘণ্টা অবরোধের পর রাত নয়টার দিকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। রেলপথ অবরোধের কারণে তিনটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পরেছেন যাত্রীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে রেলপথ অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেখান থেকে মিছিলসহ রেলস্টেশনে গিয়ে ৫টার দিকে অবরোধ শুরু করেন তারা।
আন্দোলনকারীদের দাবি হলো- সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নূন্যতম পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ করে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।
অবরোধ চলাকালীন ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠায় নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ছয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম একজন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমাদের দাবি হলো, সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা রেখে সর্বোচ্চ ৫% কোটা রাখতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার করতে হবে। এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলন করার কারণে রাবিতে এক শিক্ষার্থীকে মেরে হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাকে সসম্মানে হলে তুলে দিতে হবে এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে।
গোপালগঞ্জের যাত্রী আবদুর রহমান বলেন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের ছাড়ার সময় বিকেল সাড়ে তিনটায়। কিন্তু ট্রেনটি আসে দেরি করে। এই কারণে দেরি করে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচটার দিকে খবর আসলো রাবির শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে রেখেছে। তারা অবরোধ না তুললে ট্রেন ছাড়বে না। এই ট্রেনে গোপালগঞ্জ পৌছাতে লাগে সাত ঘণ্টার মতো। ট্রেন ছাড়লেও গভীর রাতে গিয়ে পৌছাতে হবে।
এই ট্রেনের আরেক যাত্রী নাইম ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে বেড়াতে এসেছিলাম। এখন পরিবার নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। আমাদের যেতে হবে মধুখালী স্টেশনে। এমনি এই স্টেশনে লোকজন তাকে না। আর রাত হলে আরও ফাঁকা হয়ে যায়। পরিবার নিয়ে যেতে ভয় লাগে। রাজশাহী স্টেশনে প্রায় ৫ ঘণ্টা থেকে অপেক্ষামান আছি। ছোটবাচ্চাদের খুব কষ্ট হচ্ছে গরমে।
রাজশাহী রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপত আবদুল করিম বলেন, তিনটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। আর হরিয়ান স্টেশনে বাংলাবান্ধা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। বাংলাবান্ধার রাজশাহী থেকে শুক্রবার বন্ধের দিন। বাকি ট্রেনগুলোর মধ্যে টুঙ্গিপাড়া ৬ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে গেছে। ঢালারচর এক্সপ্রেস সাড়ে চার ঘণ্টা বিলম্বে রাজশাহী ছেড়েছে।
ট্রেনের সিডিউল বির্যয়ের বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) আহমেদ হোসেন মাসুম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করার কারণে গোবরা অভিমুখী টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস, ঢালারচর অভিমুখী ঢালারচর এক্সপ্রেস এবং ঈশ্বরদীগামী কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মোট চারটি ট্রেন রাজশাহী স্টেশনে আটকে ছিল। এছাড়া, হরিয়ানে একটা ট্রেন আটকে ছিল। রাত ৯টার পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশের মত কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৬ জুন থেকে আন্দোলন করে আসছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এর আগে, ৮ ও ১১জুলাই রেলপথ অবরোধ করেছিলেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, মানববন্ধন, সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধের মত কর্মসূচি পালন করেছে তারা।