অনন্য স্বাদে বিখ্যাত ‘কুমড়োর বড়ি’

আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০১৭, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ



শীতকাল এলেই নানা ধরনের পিঠা আর তরকারির কথা মনে পড়ে। অনেক তরকারি আছে যা আমাদের সবার কাছে পরিচিত না। এমনই একটি তরকারির নাম ‘কুমড়োর বড়ি’। কুমড়োর বড়িকে নিয়ে রয়েছে নানা স¥ৃতিমধুর সময়। রয়েছে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষার গল্প। মা কুমড়োর বড়ি তৈরি করছেন, ছেলে বা মেয়ে বাড়ি আসবে, প্রিয় তরকারিটি তৈরি করছেন, অপেক্ষা করছেন প্রিয় মানুষটির জন্য। এরূপ চিত্র উত্তরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সহ পুরো উত্তরাঞ্চল জুড়েই শীতকালে মাসকলাই ও কুমড়োর বড়ি  তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের নারীরা। মাসকলাইয়ের ডালের আটা ও পাঁকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করেন তারা। এ অঞ্চলের নারীরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কয়েক মাস পূর্ব থেকে চাহিদা মতো চাল কুমড়ো পাঁকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন।
বড়ির প্রধান উপাদান হলো ভাল জাতের মাসকলই। মাসকলাই সংগ্রহ করে প্রথমে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে জাতাতে পিষে ডালের আকার দেয়া হয়। ওই ডালকে পানিতে ৫/৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ভালভাবে ডালের খোসা ছাড়িয়ে জাতায় পিষে আঠালো জাতীয় তৈরি করা হয়।
আর পাঁকা কুমড়োকে কেটে কুরানি দিয়ে চিকন করে নিয়ে কুমড়োর বিচি আলাদা করে নিতে হয়। ওই কলাইয়ের আটা ও কুরানো কুমড়ো একটি পাতিলে মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হয়। মিশ্রণ ঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য নারীরা মাঝে মাঝে বড়ির আকৃতি করে পানির পাত্রে ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন। যদি তা ডুবে যায় তবে আরো ফেনাতে (নাড়াচাড়া করতে) হয়, আংশিক ভাসলে বড়ি তৈরির উপযোগী হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সুতি মশারী বা পাতলা সুতি কাপড়ের ওপর বড়ি আকৃতি তৈরি করে রোদে শুকাতে দেয়া হয়। ৫/৬ দিন ভাল করে রোদে শুকাতে হয়। ভালোভাবে শুকিয়ে বড়ি ১২ থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। অনেকে মাসকলাইর সাথে পিঁয়াজ, পাঁকা লাউ, আলু, পেঁপে, কপিসহ নানা ধরনের সবজি মিশিয়ে বড়ি  তৈরি করে থাকেন।
আবার অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বড়ি তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে হাটে বিক্রি করে জীবন-জিবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, হাঁস, মুরগীর ডিম, সবজির সাথে বড়ির ব্যববার খাবারের স্বাদকে আরো বাড়িয়ে তোলে। লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী।