অনুষ্ঠান, অতিথি, আমন্ত্রণ জানানোর স্বাধীনতা চাই

আপডেট: মে ১০, ২০২৩, ১:১৩ পূর্বাহ্ণ

সামসুল ইসলাম টুকু:


ঘটনাটি খুব ছোট্ট। সেটাও মফস্বলের একটি ইউনিয়নের একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের। ঘটনাটি যিনি ঘটিয়েছেন তিনিও বড়সড় কেউ নন। একজন ইউপি চেয়ারম্যান। আর ঘটনার যারা শিকার হয়েছেন তারা ওই উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। যাদের হর হামেশাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এমন অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়। তাই ঘটনাটি কোন জাতীয় দৈনিকের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করেনা। এজন্য খবরটিও ছোট। এক কলামের। গত ২৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী কাথারিয়া ইউনিয়নের বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি চলতি মে মাসে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র প্রদানসহ বিদায় অনুষ্ঠানে আয়োজন করেন গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এই বিদায় অনুষ্ঠানে কাথারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইবনে আমীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে তিনি রীতিমত অপমানিত বোধ করেছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি তার লোকজন দিয়ে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানস্থলে লাগানো ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগের নির্দেশ জারি করেন। ফলে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে অবশ্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে প্রবেশপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন তার বাড়ি ও ইউপি অফিসের সামনে বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে অথচ তাকে সহ এমপি, ইউএনও এবং ওসি কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাই তার লোকজন ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এ যুক্তি দিয়ে কোন ইউপি চেয়ারম্যান এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তা কি কোন অনুষ্ঠান প- বা বন্ধ করার আইনি অধিকার রাখেন, আদৌ না। অথচ এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়, মাঝে মধ্যেই ঘটে। কোনটার প্রকাশ ঘটে, কোনটা অপ্রকাশিতই থেকে যায়। কিন্তু এসব ঘটনার প্রকৃত সুরাহা হয়না। ভ-ুলকারীদের কোন বিচার হয়না। হয়তো তেমন কোন আইন নেই অথবা যারা ভ-ুলের শিকার হন তারা আইনের শরণাপন্ন হননা। তবে এটি একটি সামাজি সমস্যা। যার সুষ্ঠু সমাধানসহ নীতিমালা প্রয়োজন। কারণ জনপ্রতিনিধি হন অথবা সরকারি কর্মকর্তাই হন না কেন তিনি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না হলে বা অতিথির সম্মান না পেলে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেবেন অথবা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন তা কোনভাবেই শৃঙ্খলা হতে পারেনা বরং তা হবে রীতিমত অনধিকার চর্চা।
সচরাচর দেখা যায় কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান সভা সেমিনার আলোচনাসভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ক্রীড়া অনুষ্ঠান এর আয়োজন করতে চাইলে সেই অনুষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি নির্বাচন করার জন্য ভাবতে হয়। কে কত ক্ষমতাশালী, প্রভাবশালী, সরকারের কোন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত তা বিবেচনা করে ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তারপরেও চিঠিতে, লিফলেটে পোস্টারে কার নাম আগে যাবে কার নাম পরে যাবে সেটাও অতিথিদের দেখিয়ে সম্মতি নিয়ে আমন্ত্রণপত্র ছাপাতে হয়। কারণ পান থেকে চুন খসে পড়লে বিপদ আছে। এছাড়া অনুষ্ঠানের জন্য কে কখন সময় দিতে পারবেন সে ব্যাপারে সমন্বয় করে সময় দিন তারিখ নির্ধারণ করতে হয়। এতেও কোন অতিথির পছন্দ না হলে বা প্রার্থিত সম্মানে ঘাটতি বুঝতে পারলে তিনি অনুষ্ঠানেই আসেন না আর তিনি যদি প্রশাসনের কর্মকর্তা হন তাহলে আয়োজকদের দুচার কথা শোনানো সহ অসহযোগিতা করতে ছাড়েন না। এরপরেও সমস্যা থাকে। অন্যান্য অতিথিদের বক্তৃতার জন্য সময় বেধে দিলেও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়না। অনেক সময় দর্শক শ্রোতাদের ধৈর্য্যের দিকেও খেয়াল করেন না। এরপরেও নিয়ম কানুনের বাত্যয় ঘটলে জবাবদিহি পর্যন্ত করতে হয়। এতে আয়োজকদের স্বাধীনতা খর্ব হলেও তাদের কিছু করার থাকেনা। এতে পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নতি তো হয়না বরং তিক্ততা ঘৃণা ক্ষোভ মনের মধ্যে পুশে রাখে।
দেখা যাক বেসরকারি পর্যায়ে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আয়োজকরা কি কি সমস্যায় ভুগেন। বেসরকারি সংগঠনগুলো সাধারণত স্বাধীনভাবেই তাদের কর্মসূচী ভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন এবং মনের মানুষদের অনুষ্ঠানের অতিথি নির্বাচন করতে পারেন। তবে অনুষ্ঠানের জন্য তাদের নিজস্ব মিলনায়তন না থাকলে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্ত থাকে। যদি সেটি সরকারি মিলনায়তন হয় তাহলে অতিথি নির্বাচন নিয়ে আয়োজক সংস্থাকে চিন্তা করতে হয়। যদিও তাদের অতিথি করতেই হবে এমন বিধিবদ্ধ আইন নেই তবে অলিখিত প্রথা বা সংস্কৃতি চলমান রয়েছে। তখন আয়োজকদের ইচ্ছে না থাকলেও তাদের অতিথি করতে হয় তাদের সহযোগিতা পাবার জন্য। অন্যথায় বাঁশখালী কাথারিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের মত নাখোশ হতে পারেন এবং অনুষ্ঠানে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেন বিভিন্ন অজুহাতে। যা কখনোয় সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারা হতে পারেনা। তাই এসব জটিলতা দূর করে সংগঠনগুলোকে তাদের ইচ্ছেমত অতিথি নির্বাচন করে অনুষ্ঠান করার স্বাধীনতা দেওয়া হোক ও অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। অনুষ্ঠান সরকার বিরোধী না হলেই হলো। আর এজন্য তো সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সর্বদাতৎপর রয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক