শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রায়শই অপমৃত্যু সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যে মৃত্যু হয় তাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বা টহহধঃঁৎধষ উবধঃয বা অপমৃত্যু বলা হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে থানায় যে মামলা রুজু করা হয় তাকে ইউডি কেস বা অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা বলে। সাধারণতঃ কোন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, পানিতে ডুবে, ইচ্ছাকৃতভাবে গলায় রশি দিয়ে, বিষপান করে কিংবা অন্য কোন উপায়ে আত্মহত্যা করলে তাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বা অপমৃত্যু বলে গণ্য করা হয়। যখন থানায় কোন সংবাদ আসে যে, কোন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে, অথবা অপর কোন ব্যক্তি বা প্রাণী কর্তৃক বা কোন যন্ত্র দ্বারা বা দুর্ঘটনার ফলে নিহত হয়েছে অথবা এরূপ পরিস্থিতিতে মারা গেছেন, যার ফলে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ হতে পারে যে, অপর কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ করেছে তখন থানার ওসি বা দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পুলিশ ১৮৬১ সালের আইনের ৪৪ ধারা, ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৫৪ ও ১৫৫ এবং পিআরবি ৩৭৭ নিয়মানুযায়ী সংবাদটি জেনারেল ডায়রিতে নোট করবেন। অতঃপর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ ধারা এবং পিআরবি ২৯৯ নিয়মানুযায়ী অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৫০ ধারা এবং পিআরবি ১২০ নিয়মানুযায়ী তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন অফিসারকে জানাবেন। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই বিভিন্নভাবে অস্বাভাবিক বা অপমৃত্যু সংঘটিত হয়ে থাকে।
অনেক সময় অস্বাভাবিক মৃত্যুজনিত লাশ থানায় না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে কবর দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংবাদটি জ্ঞাত হয়ে থানার ওসি লাশ কবর হতে তুলে সুরতহাল রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করে ময়না তদন্ত করার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট আবেদন করবেন। অতঃপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ কবর হতে তুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য অনুমতি দিবেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্ধারিত তারিখে নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর হতে লাশ তুলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ ধারা এবং পিআরপি ২৯৯ নিয়মানুসারে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে তাতে ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর গ্রহণ করে পিআরপি ৩০৪ নিয়মানুযায়ী ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৬ (২) ধারা মোতাবেক অস্বাভাবিক বা অপমৃত্যুজনিত যে লাশ ইতোমধ্যে কবরস্থ করা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন, তা হলে তিনি কবর হতে লাশ তুলতে এবং পরীক্ষা করাতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৪ (৩) ধারা এবং পিআরবি ৩০৬ নিয়মানুসারে লাশের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাবান ডাক্তার প্রেরিত লাশের ময়না তদন্ত করবেন। ডাক্তার লাশের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ মতামত সংবলিত যে রিপোর্ট প্রদান করেন তাকে ময়না তদন্ত রিপোর্ট (চড়ংঃ সড়ৎঃবস জবঢ়ড়ৎঃ) বলে। অস্বাভাবিক মৃত্যু বা অপমৃত্যু মামলার ক্ষেত্রে ময়না তদন্ত রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুটি কীভাবে হয়েছে তা ময়না তদন্তের মাধ্যমেই উৎঘাটিত হয়। অনেক সময় ময়না তদন্তে মৃত্যুর কারণ উদঘাটিত না হলে লাশের ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়। বিশেষ করে বিষপানে আস্বাভাবিক বা অপমৃত্যু সংক্রান্ত। সাক্ষ্য আইনের ৯ ও ৩৫ ধারানুসারে জেনারেল ডায়রি, সুরতহাল রিপোর্ট এবং এই আইনের ৪৫, ৪৬ এবং ৪৭ ধারানুসারে ময়না তদন্ত রিপোর্ট (বিশেষজ্ঞ মতামত-পি আর পি ২৯৭ বিধি এবং সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা) বস্তুগত সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করে মামলা প্রমাণ করা যায়।
পুলিশ ও র্যাবে দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে শত শত অস্বাভাবিক মৃত্যু বা অপমৃত্যু মামলার তদন্ত এবং তদন্ত তদারকি করেছি। এ ধরনের একটি মামলা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো। ১৯৮৩ সাল। আমি তখন রাজশাহী জেলার পবা থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত। থানার ১০ জন এসআই. এবং ৫ জন এএসআই-এর মধ্যে আমি সবচেয়ে কম বয়স্ক। তাই বয়স্ক অফিসারদের কোন সরকারি নির্দেশ শোনাতে আমি ইতস্ততবোধ করতাম। আবার না শুনিয়েও পারতাম না। এ কারণে অনেকেই হাসিমুখে কথা বললেও ভেতরে ভেতরে তারা আমার প্রতি ছিলো ঈর্ষান্বিত। বিশেষ করে দু’জন এসআই পদমর্যাদার অফিসারের রূঢ় আচরণ আমাকে খুবই মর্মাহত করতো। তারা আমার প্রতিটি কাজেই খুঁত ধরতো। থানায় যতক্ষণ থাকতো ততক্ষণ তারা আমার কাজকর্মের সমালোচনা করতো। এ যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। কারণ দীর্ঘদিন চাকরি করার পরও তারা এসআই পদে স্থায়ী না হওয়ায় সেকেন্ড অফিসার পদে আসীন হতে পারেন নি। আর আমি যেহেতু সরাসরি ক্যাডেট এসআই হিসেবে ভর্তি সেহেতু দু’বছর পরেই স্থায়ী হওয়ার সাথে সাথেই সেকেন্ড অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাই। তাই তলে তলে প্রায় সব বিভাগীয় অফিসারই আমাকে যে কোন বিষয়ে বেকায়দায় ফেলার জন্য সার্বক্ষণিক ষড়যন্ত্রের লিপ্ত থাকতো। তারা কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত অফিসার। তাদের ধারণা আমরা সরাসরি ক্যাডেট এসআই হিসেবে ভর্তি হয়ে তাদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করেছি। এ নিয়ে তাদের সাথে আমার ছিলো ঠা-া লড়াই। অবশ্য এ লড়াই আমি একাই মোকাবেলা করেছি। কারণ ১৫ জন অফিসারের মধ্যে আমিই ছিলাম একমাত্র সরাসরি অফিসার হিসেবে ভর্তি। আমাকে সহায়তা করা বা বুদ্ধি দেয়ার মতো আর কেউ ছিল না। আমি যেহেতু অবিবাহিত ছিলাম তাই তাদের ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের কোন তোয়াক্কা না করে সবসময় থানায় হাজির থেকে নিশ্চিন্ত মনে সরকারি দায়িত্ব পালন করতাম। মাঝে মাঝে যে অধৈর্য হতাম না তা নয়। অধৈর্য হলে প্লুটাসের সেই কথা মনে পড়তো। তিনি বলেছেন, “সব সমস্যার প্রতিকারই হচ্ছে ধৈর্য্য”। কুচক্রি অফিসারদের আচরণে আমার মনে কখনো ক্রোধের সঞ্চার হলে মেনকেল এর কথা মনে পড়তো। তার মতে, “ক্রোধ দমন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারা একটি মহৎ গুণ”।
আমি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি তাই মনোবল না হারিয়ে ঠা-ামাথায় বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি সামলানোর সিদ্ধান্ত নেই। আর এরই অংশ হিসেবে প্রথমেই আমি ফোর্সদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলি। সব সময় তাদের খোঁজ খবর নিয়ে ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা করতাম। তাদের বাড়ি কোথায়, কয় ছেলে-মেয়ে, কে কোথায় পড়াশোনা করে, আজ কী খেয়েছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার এ ধরনের আচরণ ও কার্যকলাপ ফোর্সদের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগায়। এ কারণে তারা আমাকে খুবই সমীহ করতো। সাধারণতঃ থানার অফিসাররা তাদের দিয়ে ডিউটি করালেও দু’একজন ছাড়া আর কেউ তাদের পরিবার বা সন্তানদের খোঁজখবর নিত না। তাই আমার এ ধরনের কার্যকলাপের দরুন আমি তাদের কাছে ক্রমেই ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠি। অনেক বয়স্ক কনস্টেবল সন্তানতুল্য ভেবে হত্যা, অপমৃত্যু মামলা ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা আমার সাথে শেয়ার করতেন। তাদের কাছ থেকে আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করি যা পরবর্তীতে আমাকে কাজ কর্মে পারদর্শী হতে যথেষ্ট সহায়তা করে। আমার ভাল ব্যবহার ও আচরণের জন্য তারা আমার সাথে ডিউটি করার জন্য সবসময় আগ্রহী থাকতো। যা অন্য অফিসাররা ভাল চোখে দেখতেন না। তারা সব সময় আমার ক্ষতির চেষ্টা করতেন। তাই আমি আমার চেতনা দিয়ে সব সময় সজাগ থাকতাম। এ প্রসঙ্গে সমরেশ বসুর কথা আমার মনে পড়তো। তিনি বলেছেন, “যার চেতনা যত সজাগ, তার ক্ষতি তত কম।”
একদিন সন্ধ্যার সময় আমি থানায় আমার অফিস কক্ষে বসে ছিলাম। এ সময় একজন চৌকিদার এসে জানায়, থানা থেকে ৩০ কি.মি. দূরে একটি দুর্গম বিলের সামান্য পানির মধ্যে একটি অজ্ঞাত যুবতীর পচা লাশ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে ডিউটি অফিসার একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করেন। এর মধ্যে কয়েকজন অফিসার ওসি-র চেম্বারে গিয়ে তার সাথে কিছুক্ষণ চাপা স্বরে শলাপরামর্শ করে সকলেই একত্রে হাসিমুখে বের হয়ে যান। তাদের দেখে আমি ভাবতে থাকি- না জানি তারা আবার আমার বিরুদ্ধে কী কথা লাগিয়েছেন! এমনিতেই দুর্গম বিলের মধ্যে যুবতীর পচা লাশের কথা শুনে তদন্তের ভয়ে অনেকেই অসুস্থতার কথা জানান। কেউ বা মামলা তদন্তের কথা বলে ডায়রিতে নোট করে থানার বাইরে চলে যান। আমি আমার রুমে বসে সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছিলাম। ডিউটি অফিসার অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজ্জু করে তদন্তকারী অফিসার নিয়োগের জন্য ওসি-র চেম্বারে প্রবেশ করেন। পাঁচ মিনিট পরে বের হয়ে আমার রুমে এসে বলেন; “সেকেন্ড স্যার, ওসি সাহেব এই অপমৃত্যু মামলার তদন্তভার আপনার উপর অর্পণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এখনি আপনি ফোর্স নিয়ে সেখানে যাবেন এবং রাত্রিতে অবস্থান করে পরের দিন লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করবেন”। আমার প্রতি উত্তর না শুনে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ডিউটি অফিসার তার রুমে চলে যান। আমি নির্বাক হয়ে চুপচাপ বসে থাকি এবং বুঝতে পারি, কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন অফিসারের ওসি-র চেম্বারে যাওয়ার কারণ। তারা ওসির কান ভাঙ্গিয়ে অজ্ঞাতনামা যুবতীর পচা লাশের তদন্তের ভার আমার উপর অর্পণের মহান এবং গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। সত্যিই তারা সফল। তাই তো তারা ওসির চেম্বার থেকে হাসিমুখে বের হয়। উল্লেখ্য যে, এর আগে আমি কোন অপমৃত্যু মামলা তদন্ত করিনি। এটা আমার প্রথম মামলা যা কিনা একটি অজ্ঞাতনামা যুবতীর পচা লাশ। ওসির রুমে যাওয়া একজন অফিসার আগ বাড়িয়ে আমার রুমে এসে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “আরে স্যারকে বললাম, মামলাটির তদন্তভার আমাদের কারো উপর অর্পণ করেন। সেকেন্ড অফিসার নতুন মানুষ। এর আগে তিনি কোন অপমৃত্যু মামলা তদন্ত করেননি। কিন্তু কিছুতেই তিনি শুনলেন না। তার একই কথা, এই মামলাটির তদন্ত সেকেন্ড অফিসারই করুক”। ভদ্রলোকের কথা আমার কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগছিলো। মনে পড়ে ক্যাম্বেলের সেই উক্তি, “মানুষকে যে আপন করতে পারে না। জীবন সম্পর্কে তার ধারণা অপরিপক্ক থাকে”।
আমি চুপচাপ বসে থাকা অবস্থায় ওসি আমাকে ডেকে পাঠান। তার চেম্বারে যাওয়ার সময় অফিস থেকে কয়েকজন অফিসারের হাসাহাসি আমার কানে আসে। একজন তো বলেই ফেলে, বিলের মধ্যে পচা লাশের সাথে রাত্রিযাপন করতে হবে। আহা কি সুন্দর সময়টা কেটে যাবে। চারিদিকে শুধু পচা লাশের গন্ধ। ভাবতেই আনন্দে মন প্রাণ ভরে যাচ্ছে। এ সময় তিনি গুন গুন করে গান গাইতে থাকেন …আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে …। একজন তো ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বলেন, যাক আমাদের মিশন তাহলে সফল হলো। পচা লাশ সেকেন্ড অফিসারের ঘাড়ে পড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি সব কিছু মুখ বুঁজে সহ্য করে যায়। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে শেক্সপিয়ারের সেই মূল্যবান কথা, “তারাই সুখী যারা নিন্দা শোনে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করতে পারে।” তাদের নিন্দা শুনে আমিও অনিচ্ছাকৃত ভুল ত্রুটিগুলি সংশোধন করে নিতাম।
আমি কোন কথা না বলে ওসির চেম্বারে গিয়ে পচা বেওয়ারিশ লাশের তদন্তভার আমাকে দেয়ার জন্য হাসিমুখে তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমার এ ধরনের আচরণে ওসি আশ্চর্য হয়ে যান। কোথায় আমি তদন্তকারী অফিসার পরিবর্তনের জন্য ওসি.র কাছে ধর্না দেবো। তা না, উল্টো মামলার তদন্তভার দেয়ার জন্য হাসিমুখে ওসি.কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ওসি ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য মুখে হাসি টেনে বলেন, জানো তোমাকে শেখানোর উদ্দেশ্যে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এই পচা লাশের তদন্তভার দিয়েছি। আমিও হাসিমুখে ওসি-কে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ ধরনের সব মামলার তদন্তভার আমাকে দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করি। ওসির চেম্বার থেকে বের হওয়ার সময় ফোর্স সহ তখনই ঘটনাস্থলে রওয়ানা হওয়ার কথা জানাই।
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৫৬ ধারা এবং পিআরবি ২৫৮ নিয়ামানুযায়ী মামলাটি তদন্তের জন্য প্রায় আধাঘণ্টা পর সঙ্গীয় ৪ জন ফোর্সসহ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হই। যাওয়ার পথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে কর্মরত আমার এক ডাক্তার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে ৬০০ টাকা দিয়ে ৩ জন (জন প্রতি ২০০ টাকা) ডোম ভাড়া করি। অতঃপর ফোর্সদেরকে ডোমসহ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে আমি আমার বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। ওই সময় পাশের বাড়ির টিভিতে গান বাজছিলো … “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো, একলা চলো, একলা চলোরে …”। আসলে তাই ঘুমানোর আগে আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম, আজ থেকে শুরু হলো আমার একলা চলার পথ। আমার মনে পড়ে আবুল ফজলের সেই বিখ্যাত উক্তি, “সেটাই শ্রেষ্ঠ আদর্শ যা মানব কল্যাণ সাধন করে”। মনে পড়ে বার্ট্রান্ড রাসেলের উক্তি, “একটি ভাল জীবন বলতে বোঝায় এমন জীবন যা ভালবাসা দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং জ্ঞানের দ্বারা চালিত হয়।” কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা বলতে পারবো না।
( আগামীকাল সমাপ্য)