‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ দায়মুক্তি সম্পর্কিত রায় । । ক্ষতিগ্রস্তরা আইনি অধিকার পেল

আপডেট: জানুয়ারি ৫, ২০১৭, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে পরিচালিত অভিযানকে দায়মুক্তি দিয়ে করা আইনকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায় ঘোষণাকারী দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর সোমবার এটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেয়। এতে বলা হয়, ওই অভিযানের সময় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা করতে পারবেন এবং হাই কোর্টে রিট আবেদনও করতে পারবেন। রায় প্রকাশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে ওই অভিযান চলে, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সেনা সদস্যদেরও রাখা হয়। প্রায় চার মাসের ওই অভিযানে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় বলে গণমাধ্যমের তথ্য, যারা সবাই হৃদরোগে মারা গিয়েছিলেন বলে সে সময় অভিযান পরিচালনাকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল।
অপারেশেন ক্লিনহার্টের নামে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ওই সময়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই অভিযানে ৫৭ জনের মৃত্যু হয় এবং প্রতিটি মৃত্যুর কারণ হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বলে দাবি করা হয়। অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মৃত্যুর কারণ বার বার একই হওয়ায় বিষয়টি ওইসময় কৌতুকেরও সৃষ্টি করেছিল। ক্লিনহার্ট অপারেশনে যে মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাই নয়- নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। আর এসব নির্যাতন  শিকার হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা। মূলত বিরোধী দলকে ভয়ভীতির মুখে রাখতেই এ ধরনের বর্বর অভিযান চালান হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়।
অথচ  ২০০৩ সালে যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন ২০০৩ পাস করিয়ে যে ন্যয়বিচার চাওয়ার পথও বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার৷ পরে দায়মুক্তির এই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না৷ ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট যৌথ অভিযানের দায়মুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন৷
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে৷ ‘‘যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা চাইলে সিভিল আইনে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন৷ আবার ক্ষতিপূরণের জন্য প্রত্যেকে আলাদাভাবে হাইকোর্টে রিটও করতে পারবেন৷ ফৌজদারি আইনেও মামলার সুযোগ আছে৷”, ‘‘রুলে হাইকোর্ট ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপুরণের কথা বলেছিলেন৷ তবে আদালত পরে রায়ে সিভিল মামলার বাইরে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে হাইকোর্টে ক্ষতিপুরণের রিট দায়েরের সুযোগ করে দিয়েছে৷ এটা বড় একটি ঘটনা৷ প্রতিকার পাওয়ার বড় একটি রাস্তা৷”
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘‘জাতীয় সংসদকে সতর্ক থাকতে হবে যেন এ ধরনের সংবিধানের চেতনা-পরিপন্থী আইন আর প্রণীত না হয়৷ ইচ্ছাধীন হত্যাকে দায়মুক্তি দিতে সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না৷”
আমরাও তাই মনে করি যে, কোনো হত্যাকেই দায়মুক্তির দেয়ার কোনো সুযোগ থাকা উচিৎ নয়। বরং এতে হত্যার সংস্কৃতিই উৎসাহিত হয়। আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় বিচার বহির্ভুত হত্যাকে নিরুৎসাহিত করবে এবং আইনের শাসনের পথ উন্মুক্ত করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ