অবশেষে মায়ের কোলে সেই নবজাতক || আসামি শুভ্রাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন, এনবিআইইউ থেকেও বরখাস্ত

আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০১৭, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত আরবান হেলথ কেয়ারে জন্ম নেয়ার পরে চুরি হওয়া নবজাতককে অবশেষে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আদালতের মাধ্যমে আসামি শাহিন আক্তার শুভ্রাকে জেলহাজতে প্রেরণের পাশাপাশি পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অপরদিকে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এনবিআইইউ) কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে আদালতের নির্দেশে শাহ মখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমান শিশুটিকে তার মা মুক্তি খাতুনের কোলে তুলে দেন। এরআগে দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক জাহিদুল ইসলাম নবজাতককে তার মায়ের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও নবজাতক চুরির দায়ে গ্রেফতারকৃত নারী শাহিন আক্তার শুভ্রাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে এনবিআইইউ’র জনসংযোগ দফতর পরিচালক এম এ কাইউম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোছা. শাহীন আকতার শুভ্রা’র নাম প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছেন। সেই সাথে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শনিবার একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। ছয় সদস্য বিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটিকে অতিদ্রুত তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক জরুরি সভা থেকে এ আদেশ প্রদান করে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতেখায়ের আলম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। শাহীন আক্তার শুভ্রাই বাচ্চাটিকে চুরি করেছেন। কিন্তু কেন তিনি বাচ্চাটি চুরি করলেন। সে বিষয়টিও আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। কারণ তিনি একজন ইউনিভার্সিটির সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। আবার তার স্বামীও একজন চিকিৎসক। উভয়ে উচ্চ শিক্ষিত। তবে হ্যাঁ দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আপনার (এ প্রতিবেদক) মতো আমাদেরও প্রশ্ন তাহলে কি ছেলে সন্তানের জন্য তাদের দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল? শুধু তাই নয়, তার (শুভ্রার) এই ধরনের অতীত রেকর্ড আছে কিনা। কিংবা এই ধরনের ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি নাÑ সেটাও আমরা দেখছি। আমাদের কাছে খবর রয়েছে। তিনি এই বাচ্চা চুরির পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে করেছেন। কারণ তিনি ইউনিভার্সিটি থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছেন।
অন্যদিকে গতকাল শুভ্রাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসাপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) নিয়ে গর্ভধারণের বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তাকে সেখান থেকে আদালতে তোলা হয়।
এ ব্যাপারে নগরীর শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, শনিবার সকালে গ্রেফতারকৃত শাহিন আক্তার শুভ্রার গর্ভধারণের বিষয়টি রামেক ওসিসির ইনচার্জ ডা. আনোয়ারা বেগম পরীক্ষা করেন। ওই নারীর গর্ভে এ সন্তান জন্ম নেয় নি বলে পরে চিকিৎসক প্রতিবেদন দেয়। এরপর পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়। তবে রিমান্ড শুনানি না করেই আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। রোববার তার রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা।
এ ঘটনায় গ্রেফতার শাহিন আকতার শুভ্রার সহায়তাকারী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠকর্মী তহুরা বেগমকেও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল তিনটার দিকে নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত নগর মাতৃ সদন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার চরশ্যামপুর এলাকার দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তি খাতুনের। ঘটনার আট দিন পর শুক্রবার দুপুরে নগরীর টিকাপাড়ার ‘সপ্তর্ষি’ নামে ৫০৭ নম্বর বাড়ি থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত শাহীন আক্তার শুভ্রা নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় ২০ জানুয়ারি মুক্তির মা মোসা. রোজিনা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করিলে মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ১০(২)/৮(২) ধারায় শাহমুখদুম থানায় ১৯ নম্বর মামলা হিসেবে রুজু হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ