সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর প্রতিনিধি :
অভাব অনটন দমাতে পারেনি দুইবন্ধু সুচন্দন মালাকার ও তামিম ইকবাল তাওফিককে। গুরুদাসপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে যৌথভাবে উপজেলার সেরা শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব অর্জন করেছে তারা। ১২৫৮ তাদের প্রাপ্ত নম্বর।
দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্রতার কারণে তারা স্থানীয় কলেজ বা রাজশাহীর যে কোনো কলেজে পড়াশোনার চেষ্টা চালাবেন। সুচন্দন উপজেলার উত্তরনারীবাড়ি মহল্লার উত্তম মালাকার ও সুচনা রাণী মালাকারের জেষ্ঠ্য সন্তান। এই দম্পত্তির ছোট ছেলে সুজয় কুমার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
জানা যায়, উত্তম মালাকারের নিজস্ব জমিজমা নেই। সম্বল বলতে মামার দেওয়া একচিলতে জায়গার ওপর টিনের দুটো ঘর তাদের। ঘরে তেমন আসবাবপত্রও নেই। অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। এই পরিবারে উত্তম মালাকারই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
অসুস্থ শরীর নিয়ে মাজা বেঁকে চলেন তিনি। কিন্তু তার অসাধারণ হাসি দেখলে মনেই হয় না তিনি অভাগ্রস্ত মানুষ। বেতনের টাকায় দুই ছেলের পড়াশোনা ও সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় তাকে। ছেলেদের উচ্চ শিক্ষার বাড়তি খরচ জোগানোর চিন্তা যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত। একফালি দুঃখের হাসি দিয়ে বলেন, ছেলের সাফল্যে প্রতিবেশিদের মিষ্টিমুখও করাতে পারেননি তিনি।
প্রাইভেট পড়ার সুয়োগ ছিলনা সুচন্দনের। তাই খেলাধুলা না করে দিনরাত সমানতালে পড়াশোনা করাই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। সে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু টানাপোড়েন জীবনে স্বপ্ন তার অনিশ্চিত।
সুচন্দনের মতোই বন্ধু তামিম ইকবাল তাওফিকের জীবনও নানানরকম দুঃখে ভরা। উপজেলার চাঁচকৈড় কাচারী পাড়া মহল্লার মাহাবুর রহমান ও বিউটি বেগমের ছোট ছেলে সে। মাহাবুর জানান- তার বড় ছেলে বিপ্লব হোসেন রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স পাশ করেছে।
ছোট ছেলে তাওফিককেও রাজশাহী কলেজে পড়ানোর ইচ্ছ তাদের। কিন্তু তার সীমিত আয়। একটি ঢেউটিনের দোকানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। সম্বল বলতে ৩ শতক জায়গার ওপর টিনের ঘরে বসবাস তাদের। তাওফিক ডাক্তার অথবা আর্মি অফিসার হতে চায়। মাহাবুর দম্পত্তির মনোবল খুব দৃঢ়। যেকোনো উপায়ে দুই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চায়।
প্রধান শিক্ষক জাহঙ্গীর আলম বলেন- তাওফিক ও সুচন্দন যথেষ্ট নম্রভদ্র চৌকস ও ট্যালেন্ট। ওরা এলাকার গর্ব। প্রয়োজনীয় শিক্ষা সহায়তা পেলে পরবর্তী ধাপগুলোতে তারা আরোও ভালো ফলাফল করবে। স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ ফরিদ ও দুখু মিয়া বলেন- দুঃখকষ্টে থেকেও সাফল্য অর্জন করা যায়-তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তাওফিক ও সুচন্দন।