শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
১৭ বছর আগের কথা। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হয়েছিল বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক। সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে ভারতীয় দলের বিপক্ষে শুরু হয়েছির টাইগারদের টেস্ট যাত্রা। কালের পরিক্রমায় এরপর কেটে গেছে ১৭টি বছর, বাংলাদেশ কাল বুধবার খেলতে যাচ্ছে শততম টেস্ট। যাদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল দেশের টেস্ট অধ্যায়, শততম টেস্টের আগে স্মরণীয় সেই টেস্টের একাদশে থাকা সেদিনের তারকারা আজ কে, কোথায় দেখে নেয়া যাক- ১. শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ-ব্যাটসম্যান : খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনেছেন অনেক আগেই। এখন নারায়ণগঞ্জে করছেন ব্যবসা। যদিও ক্রিকেট থেকে একেবারে দূরে যেতে পারেননি, তা পারবেনই বা কী করে! ব্যবসার পাশাপাশি তাই নিট কনসার্ন ক্রিকেট কোচিংয়ের সঙ্গেও তিনি জড়িত। বাংলাদেশ ও নিজের অভিষেক টেস্টে শাহরিয়ার দুই ইনিংসে খেলেছিলেন ১২ ও ৭ রানের ইনিংস।
২. মেহরাব হোসেন অপি-ব্যাটসম্যান : স্কুল ক্রিকেটের বিস্ময় বালক ও দেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান অপি ক্রিকেট ছাড়ার পর পারিবারিক ব্যবসা নিয়েই আছেন এখন। তবে ব্যবসায়ী হলে কী, ক্রিকেটকের সঙ্গে যুক্ত আছেন ঠিকই। ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে আছেন ২২ গজের সঙ্গে। শাহরিয়ারের সঙ্গে ওপেন করা মেহরাবের প্রথম টেস্টটা মোটেও ভালো কাটেনি, প্রথম ইনিংসে ৪ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরেছিলেন ২ রান করে।
৩. হাবিবুল বাশার-ব্যাটসম্যান : বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেলেছিলেন তিনি ৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটের শুরুতেই আলো ছড়ানো হাবিবুল বাশার বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এখনও অবদান রেখে চলেছেন নির্বাচকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর তাই ক্রিকেট নিয়েই আছেন বাশার!
৪. আমিনুল ইসলাম বুলবুল-ব্যাটসম্যান : তার জন্য বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট হয়ে আছে স্মরণীয়। অভিষেক টেস্টেই যে সেঞ্চুরি পূরণ করেছিরেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তাতে গড়েন ইতিহাস, খেলেছিলেন ১৪৫ রানের ঝলমলে ইনিংস। খেলোয়াড়ি জীবন ছাড়ার পর এখনও ক্রিকেট নিয়েই আছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট কোচিংয়ে কাজ করছেন। এর আগে ছিলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ডেভলপমেন্ট অফিসার।
৫. আকরাম খান-ব্যাটসম্যান : দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে আছেন আকরাম খান। বর্তমানে ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য ও ক্রিকেট অপারেশনসের প্রধান। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে তার ভূমিকা অনেক। অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংসে তার রান ছিল যথাক্রমে-৩৫ ও ২।
৬. আল শাহরিয়ার রোকন-ব্যাটসম্যান : বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সদস্য আল শাহরিয়ার রোকন প্রথম ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন ছয় নম্বরে। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য পজিশনের উন্নতি হয়ে উঠে আসেন পাঁচ নম্বরে। জায়গা বদল হলেও পারফরম্যান্সে তেমন কোনও পরিবর্তন আনতে পারেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ১২ করা রোকন দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পারেন ৬ রান। ক্রিকেট ছাড়ার পর এখন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী। সেখানেও অবশ্য ক্রিকেট কোচিংয়ের সঙ্গেই আছেন জড়িত।
৭. নাইমুর রহমান দূর্জয়-অলরাউন্ডার ও অধিনায়ক : বল হাতে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ভারতকে। সত্যিকার অধিনায়কের মতোই পারফরম্যান্স ছিল নাইমুর রহমান দূর্জয়ের। প্রথম ইনিংসে তার তোপের মুখে পড়েই ভারত অলআউট হয়ে যায় ৪২৯ রানে। ১৩২ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। বর্তমানে মানিকগঞ্জের সংসদ সদস্য ও বিসিবি’র পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।
৮. খালেদ মাসুদ পাইলট-উইকেটরক্ষক : অভিষেক টেস্টে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি উইকেটের পেছনে। এর পর আরও অনেকটা সময় গ্ল্যাভস হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন খালেদ মাসুদ পাইলট। এখন ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির মাধ্যমে দেশে ক্রিকেট উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। কাজ করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবেও।
৯. মোহাম্মদ রফিক-বাঁহাতি স্পিনার : বলা হয় তাকে দেখেই বাংলাদেশে বেড়েছে বাঁহাতি স্পিনারের সংখ্যা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্পিনারের কার্যকারিতাও মোহাম্মদ রফিকের হাত ধরে। অভিষেক টেস্টেও ঝলক দেখিয়েছিলেন এই স্পিনার। প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। খেলা ছাড়ার পরও ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর মাধ্যমে।
১০. হাসিবুল হোসেন শান্ত-ডানহাতি পেসার : দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত যে একটি উইকেট হারিয়েছিল, সেটা ছিল হাসিবুল হোসেন শান্তর উইকেট। নিজের প্রথম টেস্ট উইকেটটা এই পেসার নিয়েছিলেন সাদাগোপান রমেশের। অভিষেক টেস্টের এই সদস্য খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখেননি। ব্যবসাতেই দিয়েছেন মনোযোগ।
১১. বিকাশ রঞ্জন (মাহমুদুর রহমান)-বাঁহাতি পেসার : অভিষেক টেস্টে খালি হাতে ফেরেননি বিকাশ রঞ্জন দাস। প্রথম ইনিংসে পেয়েছিলেন একটি উইকেট। ওই একটি মাত্র টেস্ট খেলেই ক্রিকেট ছাড়েন এই পেসার। খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গে খুব বেশি আর দেখা যায়নি তাকে। এখন কাজ করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে।
তারা যা বললেন : ‘সে অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না, আমরা টেস্ট খেলব সেটি ছিল স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন যে বাস্তবে রূপ নেবে, তা কখনও ভাবিনি। আজ আমার বুক গর্বে ফুলে উঠে, যখন দেখি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, নিচ্ছে ৫ উইকেট। হ্যাঁ, এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি বাংলাদেশের টেস্ট দল। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যে দিন দেখব বাংলাদেশের টেস্ট দলকে সমীহ করছে অন্যরা।’
‘বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ধাপটা টেস্ট মর্যাদা পাওয়া। ওখান থেকেই শুরু হয়েছে ক্রিকেটের উন্নয়ন। ভাবতে ভালো লাগে যে প্রথম টেস্টের দলে ছিলাম আমিও। এই অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো কঠিন। বাংলাদেশের টেস্ট নিয়ে আমি আশাবাদী। কারণ এই সময়ে ক্রিকেটের উন্নয়নের পথে ওয়ানডের পারফরম্যান্স রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, আর বাংলাদেশ সেই পথেই হাঁটছে।’-বাংলা ট্রিবিউন