অরক্ষিত অবস্থায় নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহারে নেই আইন

আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০১৬, ১১:৫০ অপরাহ্ণ

অরক্ষিত অবস্থায় নগরীতে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। গতকাল মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন শরিফুল ইসলাম তোতা।

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী নগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহৃত হচ্ছে না। অরক্ষিত অবস্থায় নির্মিত হচ্ছে বেশিরভাগ বহুতল ভবন। এতে ভবনের নিচ দিয়ে চলাচলের সময় নির্মাণসামগ্রী পড়ে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। নিহত হচ্ছেন অনেকে। নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহারে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) আইন না থাকায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ভবন মালিকরা। ফলে ঝুঁকি নিয়েই বহুতল ভবনের নিচ দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের।
এই নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় গত সোমবার রাজারহাতা এলাকায় পাঁচতলা নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট ধসে পড়ে মারা গেছেন আলো ঘোষ (২৫) নামের এক গৃহবধূ। ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ভবনটি নির্মিত হচ্ছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায়। নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহারের জন্য বলা হলেও ওই ভবনের মালিক ব্যবসায়ী আবদুল খালেক গুরুত্ব দেন নি। প্রায় ভবন থেকে ইট, বালি, খোয়া ও সিমেন্ট নিচে রাস্তায় পড়ত।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায়। কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার না করেই নির্মিত হচ্ছে ভবন নির্মাণের কাজ। এতে ওইসব ভবন থেকে নির্মাণসামগ্রী ইট, বালি, খোয়া নিচে রাস্তায় পড়ছে। অনেক সময় প্রতিবেশিদের বাড়িতে গিয়েও পড়ছে নির্মাণাধীন ভবনের ইট, খোয়া, বালু ও সিমেন্ট। এতে প্রতিবেশিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ তৈরি হচ্ছে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মুহা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইমারত নির্মাণে বেষ্টনী ব্যবহারে আরডিএর কোনো আইন নেই। তবে আমরা লিখিতভাবে ভবন মালিকদের নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহারের জন্য বলে থাকি। যাতে নির্মাণসামগ্রী পড়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তবে যদি কেউ ভবনের নির্মাণসামগ্রী পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হোন, ক্ষতিপূরণ আদায়ে তিনি চাইলে মামলা করতে পারেন।
নগরীর আলুপট্টিতে ব্যস্ততম রাস্তার পাশে নির্মিত হচ্ছে ১৬ তলাবিশিষ্ট ভবন ‘স্বচ্ছ টাওয়ার’। কিন্তু ভবনটি নির্মাণে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে অনেক সময় ভবন থেকে ইট, বালু, খোয়া ও নিচে পড়ছে। আলুপট্টির কুদ্দুস আলী বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে অনেকবার হেঁটে যেতে হয়, ভয়ে ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যেতে পারা যায় না। ঘুরপথে রাস্তার বিপরীত পাশ দিয়ে চলাচল করতে হয়। বলা তো যায় না, কখন ভবন থেকে ইট খসে মারা পড়ব।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক উপশহরেই নির্মিত হচ্ছে প্রায় ১০টি বহুতল ভবন। কিন্তু কোনোটাতেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহৃত হচ্ছে না। ভবন শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করলে বলছেন, আমরা কী করব ভাই? মালিক যদি ব্যবহার না করেন। দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে। আমরা নিজেরাই অনেক সময় পথচারীদের সতর্ক করে দিই।
উপশহর এলাকায় এস ও এস শিশুপল্লীর অপরদিকে ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন ‘মারস জহুরা প্যালেস’ নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু ওই ভবনে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। নির্মাণসামগ্রীও রাখা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট বরাবর রাস্তার ওপর স্তূপ করে। উত্তরা ক্লিনিকের মোড় থেকে নিউমার্কেট বরাবর রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ এগোলেও চোখে পড়বে রাস্তার পাশে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন ‘মহানন্দা টাওয়ার’। এছাড়া সদর হাসপাতালের মোড় থেকে বিদ্যুৎ ভবনের দিকে এগালোই দেখা যাবে রাস্তা পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন ‘নাহার হাইটস’। ওইসব ভবনেও কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করা হচ্ছে না। নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার না করেই চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণে ‘নেট’ ব্যবহার করা উচিত। এটা একটা সচেতনতার বিষয়। ভবন থেকে নির্মাণসামগ্রী পড়ে যদি কোনো ব্যক্তি নিহত হয় তা-ও খুবই দুঃখজনক। সবকিছুর আগে তো মানুষের জীবন। এই বিষয়ে প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। তাই সবার উচিত ভবন নির্মাণের সময় নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করা। সিটি করপোরেশনও এই বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ