রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
মোস্তফা কামাল, মোহনপুর:
রাজশাহীর মিষ্টি পান সম্প্রতি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন চলছে পান উৎপাদনের ভরা মৌসুম। অর্থকরী ফসল পান উৎপাদনকারী কৃষকরা অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখিনের কথা জানিয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন জুড়ে দেশের অভ্যন্তরিণ হাটবাজারের দোকানপাট অধিকাংশ সময় বন্ধসহ লোক সমাগম ঘটছে কম। ফলে চলছেনা খিলি পান। হাটে আসছেনা পর্যাপ্ত সংক্ষক পানের পাইকারও। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও হুমকির কবলে পড়েছেন বলে পানচাষিদের দাবী।
রাজশাহীর মোহনপুরের পানচাষিরা জানায়, এখন ভরা বর্ষকাল। বর্ষাকালই পানের উৎপাদন ভরা মৌসুম। দীর্ঘদিন ধরে তীব্র খরা ও তাপদাহের কারণে পানের উৎপাদন ভাল ছিলনা। বর্ষার পানি পেয়ে পানের উৎপাদন বাড়তেই দেশ জুড়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। দেশের হাটবাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকার কারণে খিলি পানের বিক্রি কমে গেছে।এ অঞ্চলে আসছেন না পানের পর্যাপ্ত সংক্ষক পাইকার। এজন্য হাটে অধিক পরিমাণে পান আমদানী হয়ে পড়ছে। পানের ভরা উৎপাদন মৌসুমে পাইকাড় কমে যাওয়ার কারণে ভাল দাম পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিরা।
কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতি বছর মোহনপুর উপজেলায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকার পান উৎপাদন হয়। কৃষিতে অর্থনীতির বিশাল হাল ধরে রাখা পান বিক্রির জন্য উপজেলার উল্লেখযোগ্য একদিলতলা, মৌগাছি, কেশরহাট, পাকুড়িয়া, কুঠিবাড়ীসহ ১০টি স্থানে পান পাইকারী বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও পার্শ¦বর্তী বাগমারা উপজেলার উল্লেখযোগ্য, মচমইল, মোহনগঞ্জ, মাদারীগঞ্জ, একডালা এবং দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানের পাইকাড়ী হাট বসে। মোলায়েম পাতার মিষ্টি পানের অর্থনৈতিক বাজার সচল হতেই যেন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
মোহনপুর উপজেলার মতিহার এলাকার আবুল হোসেন নামের একজন পানচাষির দাবী, তিনি প্রায় ২বিঘা জমিতে পানচাষ করেন। তিনি পানচাষের উপর স্বনির্ভর। সংসার যাপনের প্রধান উৎস এটি। এরপর রয়েছে শ্রমিকের উচ্চ মজুরি। বর্ষাকালে এমনিতেই পানের দাম কম থাকে এর উপর বর্তমান পরিস্থিতি। সব মিলে আমরা বরজে ব্যবহৃত বাঁশ, সার, খৈল, কীটনাশকের যোগান দিতে পারছিনা। এভাবে চলতে থাকলে চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে আমাদের পানচাষ।
হরিদাগাছি গ্রামের পানচাষি মাহাবুর জানান, পানচাষে লাভ বেশি খরচও বেশি। এখন বর্ষাকাল। খরা মৌসুমের জন্য পান সংরক্ষন করতে এখন বরজে অনেক খাবার দিতে হয়। হাট বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাইকার উপস্থিত না থাকার কারণে কয়েক সপ্তা ধরে পানের দাম অনেক কম। পান হাটে বিক্রি করা যাচ্ছে না। পাইকাররা ভাল দাম বলতেই চাইছেনা। এজন্য আমরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছি।
শনিবার কথা হয় মোহনপুর উপজেলার একদিলতলা হাটে আসা পানের পাইকার জলিলের সঙ্গে, তিনি দৈনিক সোনার দেশের এ প্রতিবেদককে জানান, আমি নওগাঁ জেলা হতে এ হাটে পান কিনতে আসছি। সুদীর্ঘ ৩০ বছর যাবত পান কিনে আমার এলাকায় বিক্রি করি। হাটবাজারে খিলি পানের বিক্রি কমে গেছে। পানের খুচরা ক্রেতাও কম। অর্ধেক পান বিক্রিও হচ্ছেনা। লোকসান গুণতে হচ্ছে এজন্য পান কিনছি খুব কম।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাকিমা খাতুন বলেন, মোহনপুর উপজেলা পানচাষ অধ্যুষিত এলাকা। এখন পানের ভরা মৌসুম। রোগবালায়, মড়ক রোধে বরজ পরিচ্ছন্ন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে।