অস্ত্রের মুখে যুবককে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১০:১২ অপরাহ্ণ

পাবনা প্রতিনিধি


অস্ত্রের মুখে সোহাগ ইসলাম (২৫) নামে এক যুবককে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১১টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অপহরণের প্রায় ৬ ঘণ্টা পর অপহৃত যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিযোগের তীর চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, বিএনপি পরিচয় দেওয়া মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী সোহাগ সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেনের তোফাই এর ছেলে। তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএ অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকুরীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনিও পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল।

সোমবার রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোহাগ। এ সময় ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম সেখানে এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় বাধা দিতে গেলে তার চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শটগান দিয়ে আঘাত করে। পরে গুলি করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এপর রাত ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা ও পুলিশ রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করে এবং সোহাগকে উদ্ধারে সহযোগিতা করতে বলেন। এরপর কুতুব ও মুতাইকে আমি ফোন দিয়ে তাকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসতে অনুরোধ করি। তখন মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলে যে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলো তারপর সোহাগকে ছেড়ে দিচ্ছি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় এলাকার কুতুব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে ও মুক্তিপণ দাবি করে। পরে রাত ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে আমাকে ছেড়ে দেয়। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মায়া খাতুন বলেন, ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শটগান দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। পরে গুলি করে। এখনো গুলি মাথার ভিতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। এখন কিভাবে কি করবো দিশেহারা হয়ে গেছি।

অভিযোগ জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, ৫ আগষ্টের আগে ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব আমার সঙ্গে চলতো ও রাজনীতি করত। এরপর এখন তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতে ওই এলাকায় অভিযানে গেলে চাপের মুখে সোহাগকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তারা। তবে পালিয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version