বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকান সরাতে এক দিনের সময় বেধে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় সেই সময়সীমা শেষ হলেও দোকান সরায়নি কেউ। এদিন সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা করছেন দোকানীরা।
দোকানীদের কেউ কেউ বলছেন, কয়েকদিনের জন্য তারা মালপত্র সরিয়ে নিতে পারেন। তবে, একেবারে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবেননা। এরকম নির্দেশনা দু-এক বছর পরপরই দিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গেলে কয়েকদিন পরে সব ঠিক হয়ে যায়। আবার কেউ বলছেন, নতুন বানানো দোকানগুলো আগে তাদের বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো। শেষপর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কি বলে, সেটা তারা দেখবেন। তুলে দিতে আসলে, তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন দোকান ক্যাম্পাসে বসছে। এজন্যই মূলত মাইকিং করে তাদের চলে যেতে বলা হয়েছে। দোকান না সরালে এবং পুরাতন দোকানগুলোর বিষয়ে এস্টেট শাখা আবার বসে সিদ্ধান্ত নিবে।
দোকান সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অস্থায়ী জামাকাপড়ের দোকানের মালিক বলেন,’ প্রতিবারই এমন বলে। এরকম নির্দেশনা দু-এক বছর পরপরই দিয়ে থাকে (কর্তৃপক্ষ)। গত শীতেও এরকম নির্দেশনা দিয়েছিল। এই করতে করতে আমাদেরও জানা হয়ে গেছে। আর যেই স্যারেরা আসে, তারাতো সারাজীবন থাকেনা। তিন-পাঁচবছর করে থাকে। ওইরকম করতে করতে দিন চলে গেলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত শীতে দোকান তুলে নিতে বলার পরে আমরা ডাবলু সরকারের কাছে গিয়েছিনু। ডাবলু সরকার বলার পর থাকতে দিয়েছে। আগে কিবরিয়া মামা থাকতো। ওই মামা বসাতো। মানে যখন যেদল আসে, আমাদের এইভাবে বসায়। কিন্তু এইবার এখানে অনুষ্ঠান (নাট্যমেলা) হবে বলে কয়েকদিনের জন্য চলে যাচ্ছি। নাহলে টপ করে আমরা চলে যাওয়ার বান্দা? স্যারেরা দল বেঁধে এসে গাড়ি থেকে নেমে কথা বলে, আমরা চুপ করে শুনি। চলে যায় আবার দোকানদারি করি।’
টুকিটাকি চত্বরের একটি খাবারের দোকানের মালিক মো. বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘কি করবো ভাই? ঋণ করে দোকানে এক জোগ্গোর জিনিস তুলেছি। এখন হুট করে বললেই এই মালগুলো নিয়ে কোথায় যাবো? এগুলোতো নষ্ট (ডেট এক্সপায়ারড) হয়ে যাবে।’
নতুন তৈরীকৃত দোকানের বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন দোকান বরাদ্দ দিলে আমরা নতুন দোকানে উঠে যাবো।’
পাশ থেকে বাবুল হোসেনের এক কর্মচারী বলেন, ‘ঐযে গেঞ্জি বেচছে ওইগুলো অবৈধ দোকান। আমাদের এই তিন দোকানে এখনো ঐভাবে চাপ আসেনি। আগামী রবিবারে হয়তো কিছু বলতে পারে। বেঞ্চ কমিয়ে রাখতে বলতে পারে।’
টুকিটাকি চত্বরের আরেকটি খাবারের দোকানের মালিক সবুজ বলেন,’এখান থেকে চলে গেলে আমরা কি করে খাবো? আমার জীবনের প্রথম থেকে এই কর্মই করে আসছি।’
নতুন তৈরীকৃত দোকানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওইগুলোতো আমাদের কাছে এখনো হ্যান্ডওভার করেনি। নতুন বানানো দোকান আগে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে সেখানে সরে যেতে বললে ভালো হতো। আমরা এখনো মালপত্র সরায়নি। শেষপর্যন্ত কি বলে দেখছি। তুলে দিতে আসলে আমরাতো কিছু কথা বলবোই যে, স্যার আমরা যাবো কোথায়?’
মুন্নুজান হলের সামনে মো. ইদ্রিস আলী নামে বয়স্ক একব্যক্তি স্ত্রীসহ জামাকাপড়ের ব্যবসা করেন। দোকান সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চলে যেতে বলেছে, চলে যাবো। আবার কয়দিন পরে আসবো।’ পাশ থেকে ওনার স্ত্রী বলেন,’ব্যাটা, আমাদের এখানে ছাড়া কোনো গতি নাই। লাথি মারুক, ঝাটা মারুক; আমাদের এখানে আসতেই হবে।’
মুন্নুজান হলের নিকটে এবং সিরাজী ভবনের সামনের একটি জায়গায় ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি ‘আনত’ শিরোনামে একটা নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেটিকে ইঙ্গিত করে ইদ্রিস আলীর স্ত্রী বলে,’এই অনুষ্ঠানের লাইগা, না কি কারণে এসব বলছে বুঝছিনা। দুইদিন গেলে বুঝতে পারবো।’
এরপর ইদ্রিস আলী আবার বলেন, ‘বাবা, বয়স ষাট পার হয়ে গেছে। আর কোনো জায়গায় যাওয়ার বুদ্ধি নাই। মরি-বাচি, এখানেই আসবো। এখন বলছে দুইডা দিন কে আসবো নাকি। ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে দিতে বলছে। পরিষ্কার করে দিই। কথা রাখি।’
পাশ থেকে আবার ওনার স্ত্রী বলেন,’তবে যাইতাম না ব্যাটা। খালি উনুষ্ঠানডা হবে, এই কারণে যাইতেছি।’ স্ত্রীর কথায় সায় দেন ইদ্রিস আলী।
তিনি বলেন, ‘মাইরা-ধইরা বহুত করছে আমাগোরে। ব্যাট দিয়াও বাড়োইছে স্যারেরা। বলতো, “তগোরে কয়, এতো ঘ্যাচরা ক্যা? তোরা যাসনা ক্যা?” বলছি,”স্যার, কতি যাবো? কি কইরা খাবো?”‘
নতুন দোকানের বিষয়ে ইদ্রিস আলীর স্ত্রী বলেন,’ওগুলো আমাদের জন্য না, ব্যাটা। ওগুলো খাবারের দোকান।’
অস্থায়ী দোকান সরানোর সময়সীমা শেষ হওয়া এবং পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মো. শামীম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মাইকিং করে দোকানদারদের জানিয়ে দিয়েছিলাম। এখন তারা দোকান না সরালে পরবর্তী পদক্ষেপ কবে কি হবে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে। আমরা শুধু প্রশাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ক্যাম্পাসের দোকানগুলো এস্টেট শাখা দেখাশোনা করে। মাঝেমধ্যে তারা আমাদের (প্রক্টর দপ্তর) সহায়তা চায়। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন দোকান ক্যাম্পাসে বসছে। এজন্যই মূলত মাইকিং করে তাদের চলে যেতে হয়েছে। আর যেগুলো পুরাতন দোকান, তাদের বিষয়ে এস্টেট শাখা সিদ্ধান্ত নিবে। এস্টেট দপ্তর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং কোষাধ্যক্ষ স্যারের অধীনে আছে। ওনারা বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।