অস্বাভাবিক হারে মূল্যস্ফিতি

আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২৩, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কাটবে কবে?

দেশে মূল্যস্ফিতি বাড়তেই আছে। এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না বা সে রকমের কোনো ধরনের উদ্যোগও তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অক্টোবর মাসে নতুন করে খাদ্যখাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে, যা গত বছরের এই সময়ে ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
৬ নভেম্বর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে মূল্যস্ফীতির এ চিত্র দেখা গেছে।

মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার কারণ হিসেবে আলু ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধি দায়ী করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তবে মন্ত্রী মহোদয় এর ভাল দিকও দেখতে পাচ্ছেন যে, মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না, ধীরে ধীরে বাড়ছে।

বিবিএস-এর তথ্য মতে, অথচ চলতি ২০২৩ ২৪ অর্থবছরে সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশের মধ্যে। অক্টোবর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে।

মূল্যস্ফিতির ফলে দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ যে ভীষণ বেকায়দায় আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই বাস্তবতা সমাধানের ক্ষেত্রটি খুব একটা গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হয় না। যত বেশি মূল্যস্ফিতির কারণ সমূহ সামনে তুলে ধরা হয়েছে- সে তুলনায় সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত উদ্যোগের প্রতি অনীহা পরিলক্ষিত হয়েছে। উদ্যোগ যদিওবা নেয়া হয়েছে- তাও খুব বিলম্বিত উপায়ে।

চাল ও আটার দাম না বাড়লেও এ দুটি পণ্যের সাথে অন্যান্য পণ্যের সম্পৃক্ততা আছে। যেমন- সবজি, মাছ-মাংস-ডিম, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, চিনি, মশলা ইত্যাদি পণ্যের প্রয়োজন হয়। এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ায় এবং সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে সেগুলোর দাম বেড়েছে। এ কারণে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ সময় সিন্ডিকেটের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেশন ভেঙ্গে ফেলার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় নি। পণ্যের মজুদ কমে যাওয়াটা টের পেয়ে সরকার যদি আগে থেকেই আমদানির অনুমতি দেয় তাহলে ঘাটতি তৈরি হয় না। কিন্তু এটা হয় না এবং এর ফলে একতরফা সুবিধা ভোগ করেন ব্যবসায়ীরাই।

স্বস্তির কথা এই যে, ডিসেম্বর নাগাদ বাজারে শাক-সবজির সরবরাহ বাড়বে, একই সাথে বাজারে নতুন পেঁয়াজ ও আলু বাজারে আসবে। সেক্ষেত্রে খাদ্য মূল্যস্ফিতি কমে আসবে। কিন্তু আবার যখন সরবরাহ কমে আসবে- তখনও কি মূল্যস্ফিতির কোপ সাধারণ ভোক্তাদের ওপর এসে পড়বে? সেটা মোকাবিলার আগাম বন্দোবস্ত প্রস্তুত রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একটি কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনা ভাড়া মূল্যস্ফিতির পাগলা ঘোড়ায় লাগাম পরানো যাবে না।