রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
মস্তোফা জামাল জানী
সকাল থেকেই দিনটা কেমন জানি আলোহীন মেঘাচ্ছন্ন, একটানা তিনদিন ধরে বৃষ্টি চলে বিরামহীনভাবে।
সন্ধ্যার পর থেকেই আকাশটা অন্ধকারে ঢাকা, এ যেন অন্ধের স্বর্গবাস। অহনা সবসময় অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। অন্ধকারে থাকলে নাকি নিজেকে চেনা যায় খুব সহজে।
আজ অমাবস্যার রাত। এইদিনে অহনা একটু অন্য রকমভাবে নিজেকে গুছিয়ে রাখে। তাই আগে থেকেই কালো রঙের সালোয়ার কামিজ, কালো রঙের জুতা গহনাÑ সব পরিপাটি, এ যেন অন্য এক অহনা।
এত সাজুগুজু করে থাকলেও কেউ-ই যেনো বুঝতে পারে না তার ভেতরে লুকিয়ে আছে কষ্ট। অন্ধকারে একা একা ইজি চেয়ারে বসে আয়েশি তন্দ্রাচ্ছন্ন অহনা খুঁজে ফেরে সেইসব ফেলে আসা অতীতকে। এক সময় তন্দ্রাচ্ছন্নতায় সে একাকার। রাত দুটো, হঠাৎ বাহির থেকে কেউ যেন ডাকছে, ভেতরে কেউ আছেন? দরজাটা একটু খুলবেন?
অহনা ঘুমের ঘোরে শুনতে পায় সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ তার অনেকদিনের চেনা মনে হয়। চমকে ওঠে অহনা!
সটান করে দরজা খুলে দেয়। থরথর করে কাঁপছে অহনার শরীর। কী! কাকে দেখছি আমি?
কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মাটিতে পড়ে যায় রায়হান। তাড়াহুড়ো করে কুপি ধরায় অহনা, রায়হানের ডান পা থেকে রক্ত ঝরছে, কোনোমতে নিজেকে সামলে রায়হানকে নিয়ে যায় তার বিছানায়। আজ তিন বছর পর রায়হানকে ফিরে পেয়েছে। তাকে কাছে পেয়ে ছোট শিশুর মতো সে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। দীর্ঘদিন পর রায়হানকে ফিরে পেয়েছে অহনা। কসময় তাকে সবাই মৃত জেনেছে। সে আজ তার সামনে সশরীরে হাজির। অহনার চোখে এখন ভোরের সূর্য উঁকি দিয়েছে। অহনার চোখে জল গড়িয়ে টুপটুপ করে পড়ছে রায়হানের মুখে। খানিক পরই জ্ঞান ফিরে আসে রায়হানের। চোখ খুলতেই অহনার মুখে মিষ্টি হাসি, রায়হানকে জড়িয়ে ধরে অহনা।
এ কি অহনা! তুমি এখানে?
হ্যাঁ, আমি এখানে।
কিন্তু তুমি?
সবাই জানে তুমি মৃত। তাই ওরা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
কী হয়েছিল খুলে বলো।
সে অনেক কথা।
আর আমি এখানে কেমন করে এলাম?
তুমি তো নিজেই এখানে এসেছো।
তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?
কারা তোমাকে গুলি করেছে?
একটু দাঁড়াতে চেষ্টা করে রায়হান। ওফ্ ব্যথা।
হ্যাঁ, আমাকে যেতে হবে।
কাজল, রিগ্যান,এমদাদ, মহিব, ওরা কোথায়?
ভোর হবার আগেই আমাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।
না, না, তোমাকে আমি যেতে দেবো না।
আমাকে যেতেই হবে।
রায়হানের এ কথা শুনে ওকে আটকাতে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় অহনা।
না অহনা, আমাকে তুমি বাধা দিয়ো না।
ওরা আমাদের দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এ দেশটাকে না বাঁচাতে পারলে আমারা কেউ-ই বাঁচবো না।
অহনাকে এভাবেই ফেলে রেখে চলে যায় রায়হান।
চারিদিকে ঘোর অন্ধকারেই অপেক্ষা করছে ভোরের আলোকিত সূর্য। হঠাৎ মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙে যায় অহনার।