আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তির অর্থ পেল বাংলাদেশ

আপডেট: জুন ২৭, ২০২৫, ৪:৪০ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১৩৩ কোটি ডলার হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ।
এর সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপানের সহযোগী সংস্থা জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি) প্রতিশ্রুত বাজেট সহায়তা ছাড় হওয়ায় বাংলাদেশের রিজার্ভ পুরনো পদ্ধতির ‘গ্রস’ হিসাবে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে দুই বছর পর।

গত ২৪ জুন আইএমএফ এর বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুমোদন করা হয়।

সেই অর্থ বৃহস্পতিবার ছাড় করা হয়েছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নিবার্হী পরিচালক আরিফ হোসেন খান ডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফ দুই কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে। রিজার্ভ অ্যাকাউন্টে এর প্রভাব দেখা যাবে আগামী সোমবার।”
বৈদেশিক মুদ্রার অর্থ রিজার্ভে যোগ হলেও ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে ভাউচার সেটেলমেন্ট (অর্থ প্রেরণ ও প্রাপ্তির পর দুই পক্ষের মধ্যে হিসাব চূড়ান্তকারণ সার্টিফিকেট) হয়নি।

শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশে সাপ্তাহিক বন্ধ, রোববার যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া এর মধ্যে শেষ হবে না। আগামী সোমবার তা সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুন পুরনো পদ্ধতির হিসাবে গ্রস রিজার্ভে ছিল ২৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতির হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক গ্রস হিসাবে সব মিলিয়ে রিজার্ভে থাকছে ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে এর পরিমাণ হবে ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।

দুই বছর আগে গত ২০২৩ বছরের ২৬ জুন বাংলাদেশের রিজার্ভ (গ্রস হিসাবে) কমে হয় ৩০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় রিভার্জ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছিল। তবে মহামারী শেষে বিশ্ববাজারে জ্বালানি আর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, এরপর ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হলে আমদানির খরচ বেড়ে যায়। তাতে ধীরে ধীরে কমতে থাকে রিজার্ভ।

গত বছরের অগাস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গভর্নর হন আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ঘোষণা দেন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলোকে আর সহায়তা দেওয়া হবে না। তাতে রিজার্ভ বাড়বে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়।

আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিএম৬ ও গ্রস রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে।
ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি নিশ্চিত করতে অনেক দর কষাকষির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।
ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। সে বছর ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া যায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।

২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করে আইএমএফ। ওই তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার বাংলাদেশের হাতে আসে।
কিন্তু মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, বিদেশি মুদ্রার নিট সঞ্চিতি বা রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণ না হওয়ায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি আটকে দেয় আইএমএফ। অথচ চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।

আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি এবং পরে মার্চে বোর্ড সভার কথা বলা হয়। কিন্তু মার্চের সভায় বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচি বিষয়টি পর্ষদে ওঠেনি।
এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে। দুই সপ্তাহের সফর শেষে আইএমএফ তখন জানায়নি বাংলাদেশ কিস্তি পাচ্ছে কি না।

শর্তের বিষয়গুলো নিয়ে এপ্রিলের শেষভাগে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে আরো আলোচনা হয়। তবে তখনও জটিলতা কাটেনি। মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে দর-কষাকষি চলতে থাকে।
এরপর মে মাসের শুরুর দিকে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব বৈঠকে অংশ নেন।

ধারাবাহিক বৈঠকের পর বিনিময় হার পুরোটা বাজারমুখী করতে রাজি হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে ঋণ আলোচনায় অগ্রগতি হয়। গত ১৪ মে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিস্তি ছাড়ে সম্মত হয়েছে আইএমএফ।

সেদিন ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে। ঋণের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করা হবে জুনে।
এর এক মাস ১০ দিন পর আইএমএফ এর বোর্ড সভায় দুই কিস্তি অনুমোদন পায়। আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘সন্তোষজনক অগ্রগতি’ হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ