আই এস জঙ্গিদের ঘুম কেড়েছে খুলি-মুখোশ পরা সেনারা

আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০১৬, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক
যুদ্ধ! সভ্যতার বিরুদ্ধে। মানবতার বিরুদ্ধে। গোটা দুনিয়ার নজরে কেড়ে নেয়া যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা এই গ্রহের সমস্ত শান্তিকামী মানুষের। না, কিছুতেই হারা চলবে না এই কঠিন লড়াইয়ে। দাঁতে দাঁত চেপে বিনাশ করতেই হবে মহীয়ান সে শত্রুকে। অক্টোপাসের মতো ক্রমশই যার শুঁড়ের নিগড়ে বাঁধা পড়ছে এই পৃথিবীর একের পর এক জনভূমি। আষ্টেপৃষ্টে বাঁদা পড়েও মরিয়া হয়ে প্রত্যাঘাত হানতে চাইছে গোটা বিশ্ব। এ যুদ্ধের শেষ দেখে তবেই ছাড়ব! ভাবখানা যেন এমনই…।
যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! আয় তো দেখি আইসিস, দেখি তোদের পাঞ্জার কত জোর! আগ্রাসন, খুনে মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেরা হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে পারে সম মানসিকতাসম্পন্ন রক্তপিপাসু মেজাজই। এবার হাড় হিম করা সন্ত্রীসবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই খুন কা বদলা খুনের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েই লড়াইয়ে নামছে ইরাকি সেনা। মধ্যপ্রাচ্যের এই ইতিহাস প্রসিদ্ধ দেশটি আজ নয়, গত প্রায় আড়াই দশক ধরেই রক্তস্রোতের বিরামহীন বহমানতা দেখে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। সেদেশের নব্য প্রজন্ম বহু আগেই স্বপ্ন দেখাও বোধহয় ছেড়ে দিয়েছে। গোটা দেশ জুড়ে অরাজকতা আর মুষলপর্বের তীব্র অভিঘাতে রাজধানী বাগদাদসহ দেশের অন্য বড় শহরগুলিও কখন যেন মৃত্যু নগরীর চেহারা নিয়েছে। গত কয়েকবছরে আই এস আই এস জঙ্গিগোষ্ঠীর সীমাহীন দৌরাত্ম্য ও ধ্বংসের যোগফলে অরাজকতার প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে এদেশের মসুল নামের শহরটি। গোটা দুনিয়ার কাছে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হিসেবে পরিগণিত হওয়া এই ভয়াল জঙ্গিগোষ্ঠীর কালো ছায়া ক্রমশই গ্রাস করে নিয়েছে মসুলকে। বেপরোয়া এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের করাল থাবার আঘাতে রক্তাক্ত দশা শহরটির। শুধু ঘাঁটি গেড়ে বসে পড়াই নয়, গোটা ইসলামিক দুনিয়া থেকে অসহায় কিশোর, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ধরেবেঁধে এনে এই মসুলেই প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটি নিশ্চিন্তে করত আই এস আই এস বা আইসিস। এবার রীতিমতো কোমর কষেই নেমেছে ইরাকি সেনা। মুখোমুখি লড়াইয়ে জঙ্গিদের ধ্বস্ত্ করে ফের মসুলের দখলদারি নিতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর ইরাকি সেনার এই পাল্টা যুদ্ধং দেহি মনোভাবই হয়ে উঠেছে আইসিস জঙ্গিগোষ্ঠীর মাথাব্যথার কারন।
ইরাকি সেনার এই বিশেষ দলকে বলা হচ্ছে ‘গোল্ডেন ডিভিশন’। আমেরিকায় গিয়ে জঙ্গি মোকাবিলার প্রশিক্ষন নিয়ে এসেছে এরা। দলের প্রত্যেকেই সু- প্রশিক্ষিত। বিনা যুদ্ধে সুচাগ্র মেদিনী ছাড়ার বান্দা এ দলের সৈনিকরা নন। আইসিস জঙ্গিদের সঙ্গে মুখোমুখি সঙ্ঘাতে চোখে চোখ রেখে লড়ার ব্রত নিয়েই এঁরা আদাজল খেয়ে নেমেছেন। এই বাহিনীর সকলেই ‘স্কাল মাস্ক’ পরিহিত। মানে মানুষের খুলির মতো দেখতে মুখোশ। এজন্যই বোধহয় একঝলক দেখলেই শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়! হাতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। সতর্ক নজরদারি এবং শত্রুদের সঙ্গে নাছোড় লড়াইয়ের মানসিকতা- সবমিলিয়ে মসুল থেকে আই এস আই এস জঙ্গিদের সাম্প্রতিক উৎখাতের ব্যখ্যা এই দুর্জয় বাহিনীই।
নভেম্বরের প্রথম শনিবার। গোটা মসুল তখন ঝকঝকে রোদের আলোয় হাসছে। জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়ে ত্রস্ত থাকার অভ্যাস? সে তো বহুদিন আগেই গড়ে উঠেছে! সেই সকাল কিন্তু অন্য ছবিই দেখল। ইরাকি বাহিনীর পুরোভাগে থাকা এই গোল্ডেন ডিভিশনের খুলি মুখোশ পরা সেনারাই একের পর এক হানা দিলেন আইসিস জঙ্গিদের ডেরায়। উদ্দেশ্য, যতগুলো সম্ভব সন্ত্রাস ঘাঁটিকে ভেঙেচুরে গোটা এলাকাটার পূণর্দখল! মরিয়া লড়াইয়ে ছিনিয়ে নেয়া গিয়েছিল মসুলের হাফ ডজন জেলার কর্তৃত্বের রাশ। শহরের রাস্তায় রাস্তায় চলল দু তরফের মধ্যে ভয়াল সংঘর্ষ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জঙ্গিদের কবলমুক্ত করতে অনেকটাই সফল হয়েছেন ওঁরা। আগেই বলেছি, এক লহমায় জঙ্গিমুক্ত করা গিয়েছে ছয়টি জেলা।
বলা হচ্ছে, ইরাকি সৈন্যবাহিনীতে এই বিশেষ লড়াকু বাহিনী সবচেয়ে মহার্ঘ্য অলঙ্কার! মরু দেশের সেনাবাহিনীতে এই কম্যান্ডো ব্যাটেলিয়ন আমেরিকার আর্মি রেঞ্জাররা যে ধরনের ট্রেনিংপ্রাপ্ত হন সেই ধারাতেই প্রশিক্ষিত। জনশ্রুতি, আইএসআইএস জঙ্গিদের হাজার জনের একটা দলের চাইতেও গোল্ডেন ডিভিশনের একেকজন সৈন্য বেশি শক্তিধর! অল্পদিনেই শুধু সমগ্র ইরাক নয়, গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন সেনাবাহিনীর এই বিশেষ বিভাগ। এমনকী, জানা গিয়েছে ফেসবুকেও পরায় ২০ লক্ষ ‘ফলোয়ার’ রয়েছে খুলি মুখোশ পরা সৈন্যদের। মধ্যপ্রাচ্যে এমন মুখোশপরা বাহিনীর দেখা আগেও পাওয়া গিয়েছিল। ২০০৩ সালে কুয়েতে। তবে, যুদ্ধ বা সন্ত্রাসবাদী হানার আঘাত এড়ানোর জন্য নয়, এপ্রিল- মে মাসে মরুঝড়ের আঁচ এড়াতে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মসুল পূনর্দখলের দিনটিতে শহরের রাস্তায় জঙ্গি বাহিনীর মরিয়া লড়াই বেধেছিল ‘কাউন্টার টেররিজম সার্ভিস’ বা সি টি এস বাহিনীর সঙ্গে। ইরাকি সেনা ও পুলিশ তাদের সর্বতোভাবে সহায়তার কাজটিও করে গিয়েছিল নিরলসভাবে। মসুলের পূর্ব অংশে ও বারতাল্লায় ইরাকি সৈন্যের ঘাঁটিতে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের নিয়ে এসে শুশ্রুষা করা হয়। তবে, এতকিছুর পরেও মানতেই হবে, ইরাকের মসুল শহরে আইসিস জঙ্গিদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পিছিয়ে না গিয়ে বেপরোয়া প্রত্যাঘাত হেনেছে ইরাকি সেনার খুলি মুখোশ পরা বিশেষ বাহিনী। মূলত তাদের সিংহ বিক্রমেই পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে মসুলের কর্তৃত্ব। গোটা ইরাকি জনমানসে সত্যিকারের নায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন এখন ওঁরা।- আজকাল