আগস্ট এলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে বাঙালি

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০১৭, ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


১৯৭৫ সালের এ মাসেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে। ভাগ্যক্রমে দুই কন্যা শেখ রেহানা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও রক্ষা পাননি আরো অনেক স্বজন, সতীর্থরা। অথচ এই অমোঘ নেতার নির্দেশেই, বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একাত্তরে, দেশ স্বাধীনে, স্বাধিকার রক্ষায়। ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। আবার সেই স্বাধীন ভূমিতেই, তাকে নির্মমভাবে খুন হতে হলো, কিছু ক্ষমতালোভী মানুষের হাতে, এই আগস্টেই। তাই আগস্ট এলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে বাঙালি। বুকের ভেতর বয়ে যায় বেদনার স্রোত।
আগস্ট মানেই শোক। আগস্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালির কান্নাভেজা মাস। পরম বেদনায় আগস্টকে ‘বাঙালির ট্র্যাজেডি’র মাস আখ্যা দিয়েছিলেন প্রয়াত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। বুকের ভেতর পুষে গভীর ক্ষত নিয়ে বলেছিলেন, ‘আগস্টে বাঙালি অনেক কিছু হারিয়েছে। যার নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি তার স্বাধীনতা পেয়েছে, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই মহাপুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ। কালের যাত্রায় সেই ঘাতকদের বিচার হয়েছে। তারা শাস্তি পেয়েছে। তবে পিতাকে হারানোর সে ক্ষত কোনো দিন ভুলতে পারবে না বাঙালি।’
আগস্ট এলেই শোকে শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে বাঙালির মাথা। পিতা হত্যার অপরাধে, লজ্জায়, কেঁদে ওঠে সম্মিলিত শোক, বেদনা। চারদিকে কেবলই স্রোত নামে শোকস্তব্ধ মানুষের। মানুষ কাঁদে। বেদনার গান গায়। নামে শোকের মিছিলে। কালোয় কালোয়, শোকে শোকে, বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে গোটা দেশ, দেশের মানুষ।
পিতাহীন দেশে, সংকটে উপনীত বাঙালি তাই এখনো আশ্রয় খোঁজে তারই আদর্শে, রেখে যাওয়া কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরম ছায়ায়, ভালোবাসায়। মুক্তি মেলে মানুষের, তারই স্বপ্নাকাশে। মানুষ জোটবদ্ধ হয়। সম্মিলিত শোক, রূপ নেয় শক্তিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার, নতুন শপথ নেয় বাঙালি। আগস্ট এলেই মেঘমুক্ত আকাশে কেঁদে ওঠে কালো মেঘমালা। পথে, ঘাটে, বন্দরে গীত হয় শোকগাথা।
পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট কালো রাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।
এখনো মধ্যরাতে কাঁদে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সেই বেদনাবিধুর বাড়িটি। এখানেই ৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতে খুন হয়েছিলেন পিতা সপরিবারে। আজ থেকে এখানে ঢল নামবে সর্বস্তরের মানুষের। অবনত মস্তকে, শোকে-বেদনায়, পরম শ্রদ্ধা জানাবেন পিতাকে, হারানো স্বজনদের। চোখের জল ও পুষ্পার্ঘ্যে উথলে উঠবে শোক। মানুষ নতুন করে শপথ নেবে দেশ গড়ার, মানুষকে ভালোবাসার।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ