মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
চলতি ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারির পর রাজধানীর হাজারীবাগে আর কোনও কাঁচা চামড়া (ওয়েট ব্লু) প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, এরপর হাজারীবাগে কোনও কাঁচা চামড়া প্রবেশের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে। আর হাজারীবাগ থেকে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) বাস্তবায়নাধীন ‘চামড়া শিল্পনগরী-ঢাকা’ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে ট্যানারি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠক শেষে শিল্পসচিব সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ে গতকাল রোববার (১ জানুয়ারি) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম পরাগ, বিসিকের পরিচালক, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের পরিচালক এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার ও লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতিসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, চামড়া শিল্পনগরীর ১৫৪টি প্লটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮৬টি প্লটে ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। আরও ৩৫টি প্লটে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৩৭টি ট্যানারি কারখানা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি আরও ৫২টি ট্যানারি কারখানা ট্যানিং ড্রাম ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। ৩৫টি ট্যানারি স্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে এবং ৬১টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ সংযোজনের জন্য ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়েছে।
সভা শেষে জানানো হয়, সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) দু’টি মডিউল পূর্ণরূপে চালু রয়েছে। এ দু’টি মডিউলে পরিশোধন কাজের জন্য প্রতিদিন ১০ হাজার ঘনফুট বর্জ্য প্রয়োজন হলেও বর্তমানে ৩৭টি ট্যানারি থেকে মাত্র ৩ হাজার ঘনফুট বর্জ্য পাওয়া যাচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাকি দু’টি মডিউলও চালু হবে। তখন সব ট্যানারি প্রতিষ্ঠান সাভারে গেলেও বর্জ্য শোধনে কোনও সমস্যা হবে না বলে বৈঠকে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিন এগুলো তুলে নেবে। এছাড়া, বর্জ্য পরিশোধনের সঠিক মাত্রা যাচাইয়ে বুয়েট, ট্যানারি মালিক প্রতিনিধি, বিসিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি সাভার চামড়া শিল্পনগরী পরিচালনার জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে একটি কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্তও গৃহিত হয় বৈঠকে।
বৈঠক শেষে শিল্পসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্যানারি স্থানান্তর সম্পন্ন করতে চামড়া শিল্প উদ্যোক্তা সংগঠন ও সরকার যৌথভাবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালকে ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। অথচ পরিবেশবান্ধব চামড়া উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এরই মধ্যে ট্যানারি মালিকদের কেউ কেউ রফতানির আদেশ হাতছাড়া করছেন।’ ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে হাজারীবাগের ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন শিল্পসচিব।
শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য নতুন এ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও যারা এর মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তরে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিদিন ১০ হাজার করে জরিমানা গুণতে হবে।’ জরিমানা থেকে প্রাপ্ত অর্থ সম্পর্কে বিসিক নিয়মিত বিরতিতে আদালতকে অবহিত করবে বলে তিনি জানান।-বাংলা ট্রিবিউন