শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন চালু হওয়া ৯টি ব্যাংক বেপরোয়া ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যাংকগুলো লাগামহীনভাবে ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া পুরনো ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। ঋণ বিতরণে নতুন ৯টি ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫ শতাংশেরও বেশি। আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই ব্যাংকগুলোর প্রবৃদ্ধি ৫৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শতাংশ হিসাবে নতুন ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো দেখালেও পরিমাণের দিক থেকে বেড়েছে সামান্য। মূলত নতুন ব্যাংকগুলোর ভিত্তি কম হওয়ায় এমন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগের বছর কোনও একটি নতুন ব্যাংকের এক হাজার কোটি টাকা ঋণ ছিল। এবার তা বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এই হিসাবে প্রবৃদ্ধি হবে ১০০ শতাংশ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন প্রান্তিক পরিসংখ্যান বলছে, নতুন চালু হওয়া ফারমার্স ব্যাংকে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে। একইভাবে মিডল্যান্ড ব্যাংকে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ। যদিও জুন পর্যন্ত পুরো ব্যাংকিং খাতে ঋণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
জানা গেছে, পুরনো ব্যাংকের গ্রাহকদের ভাগিয়ে নিতে নতুন এই ব্যাংকগুলো ১-৩ শতাংশ পর্যন্ত কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারচেয়েও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। একইভাবে পুরনোদের চেয়ে এই ব্যাংকগুলো ২-৩ শতাংশ কম সুদে ঋণ বিতরণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে নতুন ৯ ব্যাংকে গড়ে ৬৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি হলেও পুরনো ৯টি ব্যাংকের বিনিয়োগ বা ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া পুরনো ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১১ ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ৫টির ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে নতুন ৯ ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৯ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বা ৬৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত ৯ হাজার ২১৯ কোটি টাকা বা ৫৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের ঋণ ৮৮ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেড়ে ছয় লাখ ৪২ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা হয়েছে।
অন্যদিকে, আমানত এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে আট লাখ ৫৮ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ফারমার্স ব্যাংকে গত জুনে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। এক বছর আগের তুলনায় যা ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। ঋণ প্রবৃদ্ধির এ হার পুরো ব্যাংক খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হওয়া এনআরবি গ্লোবালের ঋণ বেড়ে দুই হাজার ৭১৩ কোটি টাকা হয়েছে।
জুন পর্যন্ত মিডল্যান্ড ব্যাংকের ঋণ ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা হয়েছে। এর পরে ইউনিয়ন ব্যাংকে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৯৫৬ কোটি, মধুমতি ব্যাংকে ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৩৬৫ কোটি, মেঘনা ব্যাংকে ৫৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৭৪৩ কোটি, এনআরবি ব্যাংকে ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ২৯২ কোটি ও সাউথ বাংলা এ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে ৪৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে দুই হাজার ৫৭৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৩৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও ব্যাংক যদি আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তাহলে তা দেখার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কারণ, নতুন ব্যাংকগুলোকে আগ্রাসী ব্যাংকিং করলে এর প্রভাব পড়তে পারে সমগ্র ব্যাংক খাতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় পুরানো ব্যাংকগুলোর তুলনায় নতুন ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।’-খবর বাংলা ট্রিবিউনের