শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
মামুন
-এই তুমি নিজেরে কী মনে কর…? কপট রাগ দেখিয়ে বলল রুপা।
আমি হেসে বললাম, অনেক কিছু মনে করি…
-এমন ভাব মার যেন বিল গেটস।
-আমার মনের মত কথা বলেছেন। অনেক দিনের শখ, আমি বিল গেটস-এর মেয়েরে বিয়া করমু…। আচ্ছা বিল গেটস-এর মেয়ে আছে তো…
-জানি না…। আর বিল গেটস-এর মেয়েরে বিয়া করবা ক্যান? দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরছে?
-আসলে রাজকন্যার সাথে রাজ্য পাবার আশা আর কি!
-নিজের চেহারা দেখচো কখনো?
-রোজ ২-৩ বার দেখি। মাশাআল্লাহ, নায়ক নায়ক ভাব আছে!
-তুমি কখনো ঠিক হবা না… ফাজিল, বদ, ছাগল কোথাকার…
-আর কিছু…?
-দূর, তোমার সাথে কথা বলতেই আমার ভাল লাগে না।
-তো বলতে আসছ ক্যানে?
-আপনাকে না মন চাচ্ছে…
-কী, চড় মারতে? ওই সব অনেক খাইছি।
-লজ্জা করে না…
-আমার আবার লজ্জা শরম একটু কম আফা।
-আফা? কার আফা! এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। দূর, তুমি থাকো… আমি গেলাম। এই বলে রুপা রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেল।
রুপা। কী ভাবছেন? আমার জিএফ? আরে নাহ্। এইটা হল আমাদের পাশের ফ্লাটের মেয়ে। এক কথায় প্রতিবেশী। এতক্ষণ আমার সাথে ছাদে বকবক করে গেল।
এই মেয়েটা কেন যে আমার পিছনে লাগছে, আল্লাহ জানেন। সব সময় হাসি খুশি থাকে, আর আমার সামনে আসলে দুনিয়ার সিরিয়াস মেয়ে হয়ে ওঠে! অবশ্য দেখতে কিন্তু আলিয়া ভাট-এর মত!
এতটা সময় আমার সাথে কী বিষয়ে যেন ঝগড়া করে গেল…? ভুলে গেছি! আহ্, মনে পড়েছে। গতকাল ফেইসবুকে ওর মেসেজ-এর রিপ্লাই দেইনি। সেজন্য এসে আমারে বিল গেটস-এর মেয়ের জামাই বানাইয়া গেল…!
২.
রাত ১০টা। আজ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যাইনি। তাই ছাদে বসে তারা গুনছি। কিন্তু আজ তারা কম উঠেছে কেন?
হঠাৎ আমার কাঁধে কে যেন হাত রাখল। আমি ভূত ভূত বলে চিৎকার করে উঠলাম।
-এই চুপ চুপ, ভূত না পেতœী…
-পেতœী আফা, আমারে ছাড়িয়া দেন, প্লিজ…। আমি এত সকাল মরতে চাই না!
-এই আমি রুপা।
-রুপা ভূত, থুক্কু পেতœী… আমারে ছাড়িয়া দেন। আমি তো আপনারে কিছু করি নাই।
-এই আমি রুপা…
-বুঝলাম তো, আপনি রুপা পেতœী…
-এই গাধা, চোখ খুলে দেখো আমি কে!
অতঃপর চোখ খুলে ভালভাবে দেখে বুঝলামÑ এইটা পেতœী না, এইটা বজ্জাত মাইয়া রুপা।
-তুমি এত রাতে ক্যানে! আরেকটুর জন্য তো মইরা গেছিলাম। ফাজিল মাইয়া কোথাকার…
-তুমি না অনেক সাহসী?
-তাই বলে পেতœীর সাথে কি সাহস দেখামু!
-হিহিহি…
-আর এই রকম সাদা ড্রেস পরছ ক্যানে? এটা দেখেই আরো ভয় পাইছি…
-আপনি না…
-একবার আপনি বল, আরেকবার তুমি বল….কিছু সময় পর তুই করে বলবা… ঠিক করে সব সময় একটা বল…
-তাহলে তুমি করেই বলি।
-আইচ্ছা মেডাম, এবার আপনি রুমে যান। কেউ যদি এভাবে দেখে, তাহলে অনেক কিছু ভেবে বসবে।
-কী ভাববে?
-এত বড় মাইয়া…মাথার মধ্যে মগজ নাই এক বিন্দু পরিমাণও। তুমিই থাকো, আমিই যাই।
-তোমাকে যেতে হবে না, আমিই যাচ্ছি।
অতঃপর বালিকা আমার উপর রাগান্বিত হইয়া নিচে নামিয়া গেল। আর আমি আবার তারা গোনায় মনযোগ দিলাম।
৩.
সকাল ৯ টা ৩০। ওই দিকে ক্লাস শুরু হয়ে গেল! বাইরে গিয়ে দেখি, রিকসা নাই। এরেই বলে বাঁশ…! তাই হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর পিছন থেকে একটা ডাক এল আমার নাম ধরে। পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই প্যাঁচাল বেগম!
-এই তুমি আমাকে রেখে আসলা কেন?
-ওরে বাহ্, তোমার সাথে আমার কোন চুক্তি হইছিল নাকি যে প্রতিদিন তোমারে নিয়া কলেজ যেতে হবে?
-ভবিষ্যতে হবে…! চল আজ কোথাও বেড়াতে যাই।
-সময় নাই…
-অন্য মেয়েদের সাথে ঘুরতে সময় বের হয় কেমনে…আন্টিরে বলিয়া দিব তুমি অন্য মেয়েদের নিয়া ঘুরো!
-কী! এত বড় মিথ্যা!
-হ্যাঁ, আন্টি আমাকে কী রকম বিশ্বাস করে সেটা তো তুমি ভাল করেই জানো। হিহিহি…
-ফাজিল মাইয়া কোথার….
-বেড়াতে যাবা কিনা!
-যেতে তো হবেই। কোথায় যাব?
-তোমার যেখানে ইচ্ছা।
-জাহান্নামে যাবা?
-তুমি গেলে আমিও যাব।
-আচ্ছা ফাজিল তো! আমার পিছনে এইরাম লাগছো ক্যান?
-কেন লাগছি জানো না? আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই লাগছি। এক প্রকার ঝাড়ি দিয়েই বলল রুপা। তবে এই কথা বলে সাথে সাথে মাথা নিচু করে নিয়েছে। এখন ভাবছে কত বড় ভুল করে ফেলেছে!
-ওয়াট! তুমি জানো কী বলছ? এক প্রকার রাগ দেখিয়েই বললাম আমি। ওমা, মাইয়া দেখি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিয়েছে…! আচ্ছা মুসকিলে পড়লাম তো!
-কাঁদছ কেন?
-তুমি এই রকম করে ধমক দিলা কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসি… এ্যান্ড তোমাকেও আমাকে ভালবাসতে হবে।
-না বাসলে…
-খুন করে ফেলব!
-তাই নাকি! নিজের জামাইরে খুন করে ফেলবা?
-কিইইই!
-আরে পাগলি, তোমাকে তো আমি অনেক আগে থেকেই ভালবাসি!
-তাইলে বল নাই কেন?
-এমনি…
-এমনি ক্যান…? আজ তাইলে তোমারে খাইছি… আমারে অনেক ঘুরাইছ তুমি!
এই বলে রুপা আমার কলার চেপে ধরল! আহা, এই মেয়েটা তো আমার মানসম্মান সব খাইয়া ফালাইবে!
আজব বালিকা!
এইটা জিএফ নাকি অন্য কিছু, আল্লাহ জানেন…