আজ মহান একুশে আত্মমর্যাদা আর গৌরবের অহংকার

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। মহান ‘শহিদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। দিবসটি বিশ্বের সকল জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ঐক্য ও বিজয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান ‘শহিদ দিবস’। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে মাসব্যাপি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এ দিবসটি।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত ও জব্বারসহ আরও অনেকে।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তস্নাত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। যার ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আজ সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন সহ বিশ্বের সকল ভাষা সংক্রান্ত গবেষণা এবং ভাষা সংরক্ষণের জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।
মহান ভাষা আন্দোলন জাতীয় ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন ছিল মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার আন্দোলন। একুশের অবিনাশী চেতনা পরবর্তীকালে স্বাধিকার ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অসীম প্রেরণা ও শক্তি যুগিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতি অর্জন করে বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ বিশ্বে বিরল ঘটনা। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্ব আজ তাকে স্মরণ করছে সুগভীর শ্রদ্ধায়।
ভাষা আন্দোলন ও একুশের চেতনা জাতিসত্ত্বার শেকড়ের সাথে সম্পর্কিত। একুশ আমাদের দুঃসময়ে সাহস যোগায়Ñ লড়াই-সংগ্রামে জাতিকে পথ দেখায়। একুশের পথ ধরেই জাতি স্বাধীনতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছে। গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। একুশের চেতনা যতদিন আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে রাখবে ততদিন কোনো দানবই জাতিকে পরাস্ত করতে পারবে নাÑ এটাই প্রমাণিত সত্য।
একুশের চেতনা ধারণ করে পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সাথে যোগসূত্র স্থাপিত হবে, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জীবিত হবে এবং গড়ে ওঠবে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবি আজো উপেক্ষিত। বাঙালির ইতিহাস, সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্চায় বাংলা ভাষার ব্যবহার স্বমহিমায় উজ্জীবিত হোক, সর্বস্তরে ব্যবহৃত হোকÑআজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা।