আজ মহান বিজয় দিবস ।। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অগ্রসর বাংলাদেশ

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা পৃথক জাতিসত্তায় বিশ্ব মানচিত্রে সগৌরবে স্থান করে নেয়। বিজয়ের এ পথ-পরিক্রমা যেমন রক্তাক্ত ছিল, তেমনি বিশ্ব মানচিত্রে আলাদা একটি অবস্থান তৈরিও সহজ ছিল না। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জাতিকে একটি জনযুদ্ধের সূচনা করতে হয়েছে। অনেক মূল্য দিয়ে প্রিয় স্বাধীনতাকে অর্জন করতে হয়েছে। মহোত্তর এই দিনে বিন¤্রশ্রদ্ধা স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধি শেখ মুজিবুর রহমান, অনিঃশেষ শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে শহিদ অগণতি সূর্যসন্তানদের, অনেক শ্রদ্ধা মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্যাতিত বীরঙ্গনাদের এবং সশ্রদ্ধ সালাম জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাঁদেরই ত্যাগ ও শৌর্যবীর্যে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ।
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় জীবনে তো বটেই তৎকালীন বিশ্ব প্রেক্ষাপটেই একটি তাৎপর্যময় ঘটনা ছিল।  মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি সংগ্রামে-ঐতিহ্যে বিশ্ব দরবারে আজ দীপ্যমান। মুক্তিযুদ্ধ যুগ যুগ ধরে জাতিকে সাহস যোগাবে, ন্যায়সঙ্গত প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে দেশ জাতি নির্বিশেষে সকলকে অনুপ্রাণিত করবে।
এই বিজয়ের মধ্য দিয়েই বাঙালিদের জাতীয় পরিচয় সৃষ্টি হয়েছে। বিজয়ের মহিমা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একটি আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা গড়তে সময় লাগছে বটে। জাতির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে জাতির দুর্মর সংগ্রাম অব্যাহত আছে। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়েই এই ধারা এগিয়ে যায়। আমরাও এগুচ্ছি। যে পাকিস্তানের পাঁজর ভেঙে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেই পাকিস্তানের চেয়ে উন্নয়নের অনেক সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বাংলাদেশ এখন আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচিত হচ্ছে। পাকিস্তান একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের আকাক্সক্ষাকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট আছে। জাতির এই অগ্রধারা অব্যাহত থাকলে সেই দিন বেশি দূরে নেই জাতি অর্থনৈতিক মুক্তির মূল সোপানে নিজেদের দাঁড় করাবেই। নেতৃত্বগুণে স্বণদ্বার দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের অঙ্গীকারে। আত্মনির্ভরতা, বিশ্বাস, ভালবাসা আর আত্মগৌরবের অহংকারের এক নতুন বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিেেত্র।
৪৫ তম বিজয় বার্ষিকীর উৎসব অত্যন্ত তাৎপর্যময় এই কারণে যে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকদিশায় পথ চলছে কাক্সিক্ষত গন্তব্যের দিকে। সাম্প্রদায়িক দানবের বিপরীতে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। ইতোমধ্যেই ১৩টি মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে, যাতে ১৪ জনকে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। আলবদর শিরোমনি মতিউর রহমান নিযামী ও আলী মো. মুজাহিদ, কসাইখ্যাত কাদের মোল্লা, আলবদর শিরোমনি কামরুজ্জামান, মীর কাসেম এবং পাকিস্তানের চর সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এখনো অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া খুব সহজ কাজ নয়- চ্যালেঞ্জ ছিল, এখনো আছে। তদুপরি এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নের মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে আমরা আইনের শাসনের নবতর অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। এটা জাতি হিসেবে একটা বড় সাফল্য। মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার নিরন্তর লড়াই-ই আমাদের সুশাসনের আকাক্সক্ষাকে ত্বরান্বিত করবে। সন্ত্রাস-সহিংসতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যাত্রাকে রুদ্ধ করা যায়নি, যাবেও না; তা জাতি বার বার প্রমাণ দিয়েছে। যারা মনে করে ছিল এ দেশে ইচ্ছেমত সন্ত্রাস- রাহাজানি করা যায়, আইন তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। দম্ভোক্তি করেছে, এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে। তারা আজ ভীষণ ভিখেরি। হাত জোড় করে ক্ষমা চায়, প্রাণ ভিক্ষা চায়। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে ওই সন্ত্রাসী- জঙ্গি মানবতাবিরোধীদের চেয়ে আইনের হাত বেশি লম্বা। তাদের অনেকেই আজ অতীত। ইতিহাসের নর্দমায় স্থান নিয়েছে।  আঁধারের শক্তির পরাজয় হয়েছে বাঙালির তীব্র আলোর শপথে। এই আলোর শপথ বাঙালি জাতির বুকে, যা কখনই নিস্প্রুভ হবার নয়, পরাভব মানার নয়। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের মহিমা।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা দেশবাসীকে, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের।