আজ রাজশাহী মুক্ত দিবস

আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

ওয়ালিউর রহমান বাবু :


আজ ১৮ ডিসেম্বর। উনিশো একাত্তরের এই দিনে রাজশাহীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ৭নং সেক্টর লাল গোলা সাব সেক্টর ৪ এর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রম (সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল)
মুক্তিযুদ্ধকালে রাজশাহী ছিলো ৭ নং সেক্টরের অধীন। সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক শহিদ হবার পর এই ৭নং সেক্টরের দায়িত্ব নিলেন কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান (বীর উত্তম)। তথ্যে জানা যায়, পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজাকার আলবদর পাকিস্তানপন্থি অবাঙালিও দোসরদের মদদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে নির্যাতন করে প্রায় তিন থেকে সড়ে তিন হাজার বন্দিকে হত্যা করলো। এখানে সেখানে হত্যা করলো গুণতি নারী পুরুষকে। ৭নং সেক্টর লালগোলা সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (বীর বিক্রম )ও শেখপাড়া সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর, পূর্ব পশ্চিম ও দক্ষিণে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাজশাহী শহরের দিকে অ্যাডভান্স হতে থাকলো। মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ বিমানকে স্বাগত জানাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো স্বাধীনতাকামীরা। পাকিস্তানি সৈন্যদের পরাজয় কেবল সময়ের ব্যাপার। রাজধানী ঢাকার কাছে পৌঁছে গেছে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিশাল বহর। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে থাকলো মুখে মুখে। রোজা রাখলেন নানা বয়সি স্বাধীনতাকামী নারী পুুরুষে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হাত তুলে কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকলো সৃষ্টিকর্তার কাছে। বাড়িঘরে বেতার যন্ত্রের সামনে অপেক্ষা করতে থাকলো অবরুদ্ধ স্বাধীনতাকামী মানুষে। পাকিস্তানপন্থি অবাঙালিরা দাঙ্গা বাধানোর অপচেষ্টা করতে থাকলো।
বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো অবরুদ্ধ হয়ে থাকা স্বাধীনতাকামীরা। স্বজন হারানোর শোক বিজয়ের আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠতে থাকলো চারিদিকে। আত্মগোপন করলো রাজাকার আলবদর ও পাকিস্তানপন্থি অবাঙালিরা। মুখোশ পাল্টিয়ে বেশ কিছু দোসর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মুক্তিবাহিনীর অগ্রগামী একটি দল সাদা পতাকা উড়িয়ে সাদা পাগড়ি আর আত্মসমর্পণের বার্তা নিয়ে রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে এসে গেলো। পাকিন্তানি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করলো। স্বজনদের ভিড় জমে উঠলো বন্দিশালার আশে পাশে। বন্দিশালা থেকে বেরিয়ে আসা বন্দিরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। স্বজন হারানো শোকে আর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আসা নির্যাতিত অত্যাচারিতদের অঝর অশ্রুতে সিক্ত হতে থাকলো ‘একদফা স্বাধীনতা’ রক্ত দিয়ে হলেও পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর’ উচ্চারিত হওয়া রাজশাহীর এই মাটি। বিজয়ী মক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি আর গোলাপ পানি ছিটিয়ে বরণ করে নেয়া হলো। বরণ করে নেয়া হলো মিত্রবাহিনীকেও। খাদ্য সংকট যাতে না হয় সেজন্য পাড়া মহল্লা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করতে থাকলো। অবাঙালি মহল্লা থেকে উদ্ধার করা হলো অস্ত্র। বিভিন্ন টর্চার ক্যাম্প, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ধার করা হলো নির্যাতিত নারী পুরুষদের। স্বজন ঘনিষ্ঠরা বধ্যভূমিগুলিতে স্বজনদের লাশ খুঁজতে থাকলো । ১৮ ডিসেম্বর সকালে রাজশাহীর মাদ্রাসা হাইস্কুল মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর ৭নং সেক্টারের সাব সেক্টর ৪এর তৎকালিন কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা তুলে রাজশাহীকে মুক্ত ঘোষণা করলেন। এই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি সৈন্য ও দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত অনেকের কথা শুনে শিহরিত হয়ে উঠতে থাকলেন উপস্থিতরা। ৭নং সেক্টরের সাব সেক্টর ৪ এর তৎকালিন কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে এই অঞ্চল পরিচালনা জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব্ দেয়া হলো। তৎকালীন পৌরসভা ভবনকে কন্ট্রোল রুম করে পরিচালিত হতে থাকলো প্রশাসন। শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে আহ্বান জানানো হলো।

১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত রাজশাহীতে পতাকা তুলছেন সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ