আটকের পর নির্যাতনে ২ জনের মৃত্যুর অভিযোগ, হলো মৃতদের নামে মামলা

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ৮:৪৬ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


গাইবান্ধার সাঘাটায় যৌথবাহিনীর অভিযানে আটকের পর মৃত্যু হয় দুই ব্যক্তির। মৃত দুজনসহ অভিযানে আটক পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ। এদিকে, আটকের পর নির্যাতনের কারণে ওই দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন স্বজন এবং এলাকাবাসী।



বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) ইবনে মিজান। তিনি জানান, যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে এই মামলা দায়ের করেছেন।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের ভরতখালীর গোবিন্দী এলাকা থেকে তাদের পাঁচ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মামলার আসামিরা হলেন– সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট (৪৫), গোবিন্দী বাঁশহাটি এলাকার সেরায়েত আলীর ছেলে শাহাদাত হোসেন পলাশ (৪৫), উত্তর সাথালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮), গোবিন্দী এলাকার রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫) এবং একই এলাকার মালেক উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

আসামিদের মধ্যে সোহরাব হোসেন আপেল ও শফিকুল ইসলামকে যৌথ বাহিনী আটকের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে আপেলের মৃত্যু হয়। একইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শফিকুল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

মৃত ব্যক্তির নামে মামলা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান বলেন, ‘মামলার চার্জশিটে তাদের নাম বাদ পড়বে।’
তবে, এ বিষয়ে এই মামলার বাদী ও সাঘাটা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার রায়ের দাবি, ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুর আগেই মঙ্গলবার সকালে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এদিকে, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে আপেলের মৃত্যুর পর চিকিৎসাধীন দুই জনের একজন শাহাদাত হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরজন চেয়ারম্যান মোশাররফ সুইট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া রিয়াজুল ইসলাম রকি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অপরদিকে, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে সোহরাব হোসেন আপেল এবং বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া শফিকুল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, আটকের পর নির্যাতনের কারণে ওই দুজনের মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি বাজার এলাকার সড়কে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে নিহত ও আহতদের স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মান্ষু অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আটকের পর চেয়ারম্যান সুইটসহ পাঁচ জনকে বেদম মারধর ও নির্যাতন করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তাদের নির্যাতনের কারণেই আপেল ও শফিকুলের মৃত্যু হয়েছে।’ এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনবারের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট এবং তার ভাই সুজাউদ্দৌলা এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। যমুনা নদীর চর দখলসহ দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ বালুর ব্যবসা করে আসছিলেন। এতে ফসলি জমি নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এতদিন আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি কেউই। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে একে একে মুখ খুলতে শুরু করেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান ও তার ভাইসহ তার সিন্ডিকেট বাহিনীকে আটকের দাবিতে কয়েক দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেন তারা।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ