আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ৮:৪৫ অপরাহ্ণ

রাবি প্রতিবেদক


আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, গণঅভ্যুত্থানে গ্রাফিতির ছবি পাঠ্যপুস্তকে পুনঃস্থাপন এবং আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও পুলিশি নিপীড়নের বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’- এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বুদ্ধিজীবী চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর একই স্থানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভ মিছিলে ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আমার ভাইকে মারলো কেন, রাষ্ট্র তোমার জবাব চাই’, ‘লড়াই হবে সমান তালে, পাহাড় কিংবা সমতলে’, ‘আমরা নই উপজাতি, আমরা সবাই বাংলাদেশি’, ‘তোমার আমার পরিচয়, আদিবাসী আদিবাসী’, ‘অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চলবে, চলবে’, ‘অস্তিত্বের সংগ্রাম চলবে, চলবে’, ‘আমরা আছি, থাকবো, যুগে যুগে লড়বো’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত। তাদের উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে অবজ্ঞা করা হয়। এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, একটি ছোট গোষ্ঠীকে নিয়ে এতটা ভয় পান কেন? আদিবাসী সমাজ এখন জেগে উঠেছে। আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।

সমাবেশে আদিবাসী স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটির সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স হেমন্ত টুডু বলেন, আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে এই ভূমিতে নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত। আমাদের উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে অবজ্ঞা করা হয়, যা আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাই। সামান্য একটি গ্রাফিতি দেখে অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিন্তু যারা এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, তারা আমাদের মতো একটি ছোটো গোষ্ঠীকে নিয়ে এতটা ভয় পান কেন? আদিবাসী সমাজ এখন জেগে উঠেছে। আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছিল, কিন্তু ‘স্টুডেন্টস ফর সভ্রেনটি’ নামের একটি সংগঠন তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আহতদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে আমি অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাই। পাশাপাশি, আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে একটি সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানাই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, যারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে, তারা জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে না। কোনো গোষ্ঠী বা, সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করে জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার যদি এই চেতনাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে, তাহলে তাদেরকে কঠিন জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান শাহারিয়ার আলিফের সঞ্চালনায় সমাবেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী কাজী মামুন হায়দার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠীর ব্যক্তি অংশগ্রহন করেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ