আন্দোলনকারীদের দখলে রাবি, ক্যাম্পাস ছাড়া ছাত্রলীগ, চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন, আন্দোলন নিয়ে থমথমে রাজশাহী

আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও রাবি প্রতিবেদক:


রাজশাহীতে কোটা আন্দোলনকারীরা দিনব্যাপি খন্ড খন্ড বিক্ষোভ করেছে। এই বিক্ষোভের ফলে রাজশাহীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল তিনটা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয় আন্দোলনকারীরা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের দেখা মিললেও দুপুরের পর থেকে তাদের দেখা মেলেনি। কোটা আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীরা রাবির মেইন গেট ছেড়ে দিয়েছে।

সরেজমিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, দুপুর পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজারের দিক থেকে স্লোগান দিয়ে প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। এসময় তাদের প্রায় সকলের হাতে লাঠি দেখা যায়। পরে তারা মেয়েদের হলের সামনে গেলে, হল থেকে মেয়েরা বের হয়ে আসে। এরপর তারা স্লোগান দিয়ে হবিবুর রহমান হলের মাঠের দিকে যান।

একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহমখদুম, সৈয়দ আমীর আলী ও নবাব আব্দুল লতিফ হলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হন। তারা একত্রে শামসুজ্জোহা, মাদার বখস হলের সামনে যান। তখন মাদার বখস হলের গেটে তালা দিয়ে হলের সামনে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মাদার বখস হলের গেটে তালা ভেঙে দিলে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন জিয়াউর রহমান ও হবিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা।

দুইদিকের শিক্ষার্থীরা হবিবুর রহমান হল মাঠে একত্রিত হন। এরপর তারা সোয়া তিনটার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে যান এবং তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় কিছু শিক্ষার্থীকে ২০টা মত মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে আগুন দিতে দেখা যায়। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ১৫-২০ জন নেতাকর্মীসহ বঙ্গবন্ধু হলের ছাদে অবস্থান নেন। কয়েকজনকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ কয়েকটি রুম ভাঙচুর করতে ও বিছানাপত্র নীচে ফেলে দিতে দেখা যায়। পরে সে সকল বিছানাপত্রে আগুন দেওয়া হয়।

এরপর পৌনে চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোডে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিলসহ মেয়েদের হলের সামনে দিয়ে ছেলেদের হলের দিকে যান। এসময় কিছু শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান ও মাদার বখস হলে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রুম ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এরপর তারা মিছিলসহ এসএম হল ও মেডিকেল সেন্টার ও মতিহার হল হয়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় কিছু শিক্ষার্থী আবারো বঙ্গবন্ধু হলে ভাঙচুর করেন। বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এখন আমরা হলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রভোস্টদের সঙ্গে মিটিং করবো৷ আর ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। তালাইমারির ওইদিকে বিজিবি রয়েছে। ছাতৃরদের কথা ভেবে আমরা পুলিশ-বিজিবিকে ক্যাম্পাসের ভিতরে আনি নাই। আর আমরা নিজেরাও তৎপর থাকবো।

এর আগে, সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল থেকেই ক্যাম্পাসে শোডাউন দিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। সেসময় কয়েকজন একসঙ্গে হলেই তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে বলতে দেখা যায়। সোমবার বিকেলে বাম ছাত্র নেতাদের উপর হামলা করারও অভিযোগ উঠেছিল কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

এদিকে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে অবস্থান নিতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এরা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশাল এক মিছিল নিয়ে তারা তালাইমারীর দিকে যায়। সেখানেই এখন অবস্থান করে। সন্ধ্যার পর তারা সেখান থেকে ফিরে আসে। তবে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সেখান থেকে ফিরে এসে কিছু শিক্ষার্থী রাজশাহী কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।

কোটাপদ্ধতি সংস্কার, ঢাবি ও জাবিতে শিক্ষার্থীদের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী-ঢাকা বাইপাস সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকায় সংলগ্ন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে তারা। ঘণ্টাব্যাপি এই কর্মসূচি চলে।
শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন তারা।

কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এর জন্য চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর সাথে অতিরিক্ত পুলিশও আছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে কাজলা গেট এলাকায় বিজিবি দেখা গেছে। এছাড়াও তালাইমারী মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন আছে।
রাজশাহী-১ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম ম-ল জানান, কোটা আন্দোলনে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাহেববাজার ও তালাইমারী এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী কলেজের কোটাবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হলে তাদের ওপর চড়াও হয় রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা মুসলিম হলে ঢুকে কোটা বিরোধীদের খুঁজে বের করে ও চড়-থাপ্পড় দেয়। এরপর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী নগরীর জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তাদের হাতে কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ