আন্দোলনকারীরা অনড়, রুয়েটে স্থবিরতা || দুই ব্যাচের ক্লাশ-পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

রফিকুল ইসলাম



রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণের জন্য নূন্যতম ৩৩ ক্রেডিট প্রথা বাতিল দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অচল হয়ে পড়েছে বিশ^বিদ্যালয়টি। প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানের কারণে রুয়েটে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এদিকে আন্দোলনকারী দু’টি সিরিজের ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবাল বিকেলে রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মোশাররাফ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রুয়েটের একাডেমিক কমিটির ৮৬তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর পদ্ধতি বাতিল না করা হলে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবির বিষয়ে শুক্রবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এর মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকেলে রুয়েটের জনসংযোগ দফতর থেকে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রুয়েটের ১৪ ও ১৫ সিরিজের সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। অ্যাকাডেমিক কমিটির ৮৬তম জরুরি সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তের আলোকে এ আদেশ জারি করা হয়। তবে অন্য সিরিজের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম যথারীতি চলবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুয়েট উপাচার্য ক্যাম্পাসের শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। টানা চতুর্থ দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে গত সোমবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেয়ায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে গতকাল বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মীমাংসা বৈঠকে বসে রুয়েট উপাচার্যসহ উর্ধ্বতন কর্তারা। বিকেল সাড়ে ৩টায় বৈঠক শুরু হয়ে চলে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। বৈঠকে রুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি নাইমুর রহামন নিবিড় ও সাধারণ সম্পাদক তপু চৌধুরীসহ আন্দোলনকারী ৮/১০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে নূন্যতম ক্রেডিট ২৪ করার দাবি জানায়। তবে প্রশাসন তা মেনে নেয় নি। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রতি বর্ষের দুই সেমিস্টার মিলিয়ে ১০টি বিষয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৮টিতে পাশ করার (যাতে ৩২ ক্রেডিট পূরণ হয়) বাধ্যবাধকতা দিতে চায়। তবে তা মেনে নেয় নি শিক্ষার্থীরা। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কোনো সুরাহা না হয়েই বৈঠক শেষ হয়।
চতুর্থ দিনেও আন্দোলন অব্যাহত : টানা চতুর্থ দিনের মত গতকাল মঙ্গলবার ক্লাশ বর্জন করে সকাল ৯টা থেকে শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১টায় মানববন্ধন এবং সাড়ে ১২টায় গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে তারা। কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ৩৩ ক্রেডিট প্রথা বাতিল করে আগের পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানান। আজ বুধবার সরকারি ছুটি ও পরের দুই দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার রুয়েটে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় টানা তিনদিন কর্মসূচি পালন করবে না শিক্ষার্থীরা। তবে শনিবারের মধ্যে দাবি না মানা হলে ক্লাস বর্জন, অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সোমবার রাতে আমাদের এক প্রতিনিধি দলের সাথে উপাচার্য স্যারের আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের দাবি মানতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। যদি প্রশাসন আমাদের এ দাবি না মানে তবে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা স্মারকলিপি প্রদান করবো।
এদিকে রুয়েটে টানা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও নিজ অবস্থানে অনড় রুয়েট প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি অযৌক্তিক, এটা মেনে নেয়া হবে না। ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ রেখে ক্রমে আন্দোলন স্থিমিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন রুয়েটের উর্ধ্বতন কর্তারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সুরাহা করার, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদফা বসাও হয়েছিল। আশা করছি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে।
দু’টি সিরিজের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে একাডেমিক কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ক্লাশ-পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত ক্লাশ-পরীক্ষা চালু করা হবে।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, রুয়েট শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে বাধ্যতামূলক ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ প্রথা চালু করে রুয়েট প্রশাসন। এর আগে কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা অনুপস্থিতির কারণে ন্যূনতম ক্রেডিট অর্জন করতে ব্যর্থ হলেও পরবর্তী বর্ষে ক্লাস-পরীক্ষা দিতে পারতো। সেক্ষেত্রে পরবর্তী পরীক্ষায় উক্ত ক্রেডিট অর্জন করতে হতো। নিয়ম চালুর পর ২০১৫ সালের আগস্টে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। পরে দাবি আদায় ছাড়াই আন্দোলন বন্ধ করে দেয় তারা। প্রায় দেড় বছর পর আবারও একই দাবি নিয়ে টানা আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।