বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে যে মামলাগুলো হয়েছে সেগুলো তদন্তে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাজে লাগানোর কথা বলেছেন বাহিনীর প্রধান বাহারুল আলম।
পাশাপাশি এসব মামলায় ‘নিরীহ আসামিদের’ হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময়কার এসব মামলা তদন্তের জন্য পুলিশের আটটি রেঞ্জে ‘মনিটরিং ও মেন্টরিং’ কমিটি করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলোর তদন্তে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারাও যুক্ত থাকবেন।
গত ২০ নভেম্বর নতুন মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পান চার বছর আগে অবসরে যাওয়া বাহারুল আলম। এরপর বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে পুলিশের তরফে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়েছেন বাহিনীর প্রধান বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, “যারা আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের সহায়তায় পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা আইন ভঙ্গ করেছেন ও বাড়াবাড়ি করেছেন।
“নিরপরাধ পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। আমি পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
মামলার তদন্তে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের যুক্ত থাকার বিষয়টি তুলে ধরে আইজিপি বলেন, “এই মামলাগুলো সারাদেশের বিভাগ (রেঞ্জ) অনুযায়ী আলাদা মেন্টরিং ও মনিটরিং কমিটি করেছি গতকাল (বুধবার)। আজকেই আমি অর্ডারটা দেব।
“ঊর্ধ্বতন ও অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ কিছু তদন্তকারীদের সঙ্গে অবসরে যাওয়া কিছু কর্মকর্তা যাদের বিপুল অভিজ্ঞতা আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা আটটা জায়গায় আলাদা আটটা মেন্টরিং টিম করেছি। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতি থানায় ওই মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় গাইডেন্স দেওয়া, প্রয়োজনে মেন্টরিং করা।”
এ পদক্ষেপের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেকের দক্ষতাটা আসলে আশানুরূপ নয়। এজন্য মেন্টরিং টিমগুলো করেছি। আমার বিশ্বাস এতে তদন্তের মানটা একটু বাড়বে।”
এর আগে ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অবসরে যাওয়া পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সদস্যদের যুক্ত করার কথা বলে সরকার।
ট্রাফিকের কাজে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি করে যুক্ত করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, “এটা সাময়িক সময়ের জন্য করছি। কিন্তু আমরা ওইভাবে আসলে করতে চাচ্ছি না। তবে একটা সুযোগ আছে- যারা বিএনসিসি, ক্যাডেট অথবা স্কাউট তাদের সহায়তা আমরা নিতে পারি।”
তিনি বলেন, “এরকম একটা পরিবর্তনের পরে আমাদের সক্ষমতারও একটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। মানে সঠিক লোকটাকে সঠিক জায়গায় দিয়ে আমরা সারতে পারিনি।
“আমাদের ভেতরের পুনর্গঠনের ও পুনসজ্জিতকরণের কাজটা চলছে। শুরুতে বেশ কিছু ট্রান্সফার-পোস্টিং করতে হয়েছে বিভিন্ন কারণে। এখন আমরা ওই জায়গাটাতে সচেষ্ট আছি যে, অন্তত একটা তদন্ত করতে পারে যথাযথভাবে, তাদেরকে খুঁজে বের করে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে অনেক ঢালাও মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে।
মামলা থেকে নিরীহ মানুষকে কীভাবে বাদ দেওয়া হবে সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশপ্রধান বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে কোন নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়।”
আন্দোলনের ঘটনায় অনেক মামলা হওয়ার কথা তুলে ধরার তিনি বলেন, কোনো কোনো মামলায় আসামির সংখ্যা অনেক, যার মধ্যে অনেক নিরীহ লোকজনও থাকার কথা তিনি জেনেছেন।
তিনি বলেন, “এসব মামলাকে কেন্দ্র করে অনেকে বাণিজ্য করছে, তারাও প্রভাবশালী লোক। নিরীহ
লোকদের আসামি করা হয়েছে, তাদের নানা প্রলোভন দেখাচ্ছেন, প্রতারিত করছেন, টাকা নিচ্ছেন।”
“আমরা আহ্বান জানাতে চাই, এ ধরনের প্রতারণায় প্রতারিত হবেন না। যদি আপনাদের সরাসরি কোনো ইনভলেভমেন্ট না থাকে তাহলে আমরা বিনা যুক্তিতে, বিনা তদন্তে পাইকারি হারে কাউকে গ্রেপ্তার করব না।”
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হওয়া হত্যা মামলার আসামিদের কেউ কেউ ফিরে আসছে। এমন ঘটনার মামলাগুলোর কার্যপদ্ধতি কী হবে-এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, “এক্ষেত্রে আমাদের সুপষ্ট আইনানুগ পদ্ধতিই আছে। উনার ভুল বোঝার কারণে যদি মামলাটি দিয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিষয়টি আসবে না। কিন্তু তিনি যদি ইচ্ছে করে করে থাকেন তাহলে আইনে বলা আছে, বাদীকে ২১১ তে (ধারা) বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটাই আমাদের অনুসরণ করা উচিৎ।”
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ