আপত্তির মধ্যেই ‘বাল্যবিবাহ’ বিল সংসদে

আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০১৬, ১১:৪৪ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে উঠেছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বৃহস্পতিবার বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”
এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে উৎসাহিত হবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এর জবাবে বুধবার সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞান’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।
তবে ওই বিলের পক্ষে সরকারের যুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউ বলেছে, “এ থেকে মনে হচ্ছে, ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাকেও ওই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে।”
ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, “বাল্যবিবাহ সারা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নীচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছর বয়সীদের বিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।”
এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।”
বিলে বলা হয়েছে, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের সম্মুখীন হতে হবে। আগের আইনে এই অপরাধে নারীর কারাদ-ের বিধান মওকুফ থাকলেও এবার তা নেই।
বাল্য বিয়ে পরিচালনা বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। বাল্য বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যদের সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে একমাসের কারাদ- এবং এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।
প্রস্তাবিত আইনে বাল্য বিয়ে নিবন্ধকের জন্য একই শাস্তির পাশাপাশি সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, বাল্য বিয়ের জন্য উদ্যোগী অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আদালতের নির্ধারিত ফরমে যদি মুচলেকা দেয় যে, সে তার এলাকায় বাল্য বিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হবেন এবং নিজে ভবিষ্যতে এ কাজে সম্পৃক্ত হবেন না তবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এই আইনের অধীন আরোপিত জরিমানা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য হবে। এ আইনের অধীনে বিচার হবে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে।- বিডিনিউজ