আপেল চুরির অভিযোগে শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন!

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭, ১২:১১ পূর্বাহ্ণ

গুরুদাসপুর প্রতিনিধি



গরিব ঘরের ছেলে। দুইমুঠো ভাত জুটে না সময়মতো। তার ওপর আপেলের দোকানে এসে লোভ সংবরণ করতে পারে নি শিশু সাইদুল (১০)। সুযোগ বুঝে দোকানির অগোচরে একটি আপেল চুরি করে খেয়েছিল শিশুটি। শাস্তি হিসেবে দোকানি ও তার সমর্থকরা রশিদিয়ে বেঁধে অমানুসিক নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর।
গতকাল শনিবার বেলা দেড়টার দিকে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশু সাইদুলকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আজম আলী ঘটনায় সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আপেলের দোকান সংলগ্ন  সমজিদের গ্রীলের সঙ্গে রশি দিয়ে শিশু সাইদুলের হাত-পা বাঁধা ছিল। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয় নি।
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজারের মার্কাজ সমজিদের সামনে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটেছে। শিশু সাইদুলের বাড়ি উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের জাকিরের মোড় নামক স্থানে। তার বাবার নাম আবদুল মিয়া। তিনি পেশায় কৃষি শ্রমিক। দুইভাই দুই বোনের মধ্যে সাইদুল তৃতীয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মসজিদ সংলগ্ন হানিফের ফলের দোকান থেকে শিশু সাইদুল একটি আপেল নিয়ে দৌঁড় দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফলের দোকানি ও তার সমর্থকরা শিশুটিকে পাকড়াও করে। এক পর্যায়ে নাইলনের দড়ি দিয়ে সমজিদের গ্রীলের সঙ্গে শিশু সাইদুলকে হাত-পা বেঁধে চরথাপ্পরসহ পাদুকা দিয়ে পেটায় ফল ব্যবসায়ী হানিফ ও তার সহযোগী সিএনজি চালক পিন্টু ও মাইক্রো চালক মজনু। ঘটনাটি বেলা ১১টার দিকে ঘটলেও দুপুরে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিশুটিকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। চাঁচকৈড় হাটের দিন হওয়ায় শতশত মানুষ ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করলেও শিশুটিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে নি কেউ।।
প্রত্যক্ষদর্শী অন্ততপক্ষে ১০ জন ব্যক্তি জানালেন, গ্রীলের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের সময় শিশুটি ছিল অসহায়। তার দুইচোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছিল। শিশুটির এমন অসহায়ত্ব সকলে প্রত্যক্ষ করলেও কারো ভেতর মমত্ববোধ দেখা যায় নি। উপরন্ত চিত্রটি মুঠোফোনে ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে। কেউ কেউ হাতে লোহার রড, কাঠের বাটাম নিয়ে শিশুটিকে নির্যাতনে উদ্যত হন। পরে স্থানীয় দুইজন সংবাদকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে নির্যাতন বন্ধ করলেও তাকে ছেড়ে দেয়া হয় নি।
শিশু সাইদুল জানায়, সকালে খালিপেটে বাড়ি থেকে বের হয়। পেটে খিদে লাগায় আপেলটি চুরি করতে বাধ্য হয়েছিল সে। কিন্তু তারা ধরে নির্যাতন চালায় তার ওপর। অনেক কান্নাকাটি, আকুতি জানিয়েও কাজ হয় নি। আব্বা (শিশুর বাবা) আসলে আপেলের দাম দিয়ে, বাড়ি যাইয়া ভাত খাবো।
আপেল দোকানি হানিফ জানায়, তিনি দোকান ফেলে একটু পাশে গিয়েছিলেন। আপেল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেখে পিন্টু ও মজনু ড্রাইভার শিশু সাইদুলকে ধরে বেঁধে ফেলে। রাগে ক্ষোভে তাকে (শিশু সাইদুলকে) চরথাপ্পর দেয়া হয়েছে। সাইদুলের বাবা এলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
বেঁধে চরথাপ্পর মারার ঘটনা স্বীকার করে পিন্টু ও মজনু ড্রাইভার জানান, সাইদুলের বাপ-মা এলে বিচার করে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হবে শিশু সাইদুলকে। তবে শিশু নির্যাতন অপরাধ, এমন আইন তাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার মাহাতো বলেন, খবর পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। শিশুটি থানা হেফাজতে রয়েছে। শিশু সাইদুলের বাবা এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ