সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আবারও দুই দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পাশে কর্মকর্তা, সহায়ক কর্মচারী, সাধারণ কর্মচারী ও পরিবহন কর্মচারী সমিতির ব্যানারে দিনব্যাপী এ কর্মবিরতি পালন শুরু করেন তারা।
তবে, বিভাগ ও দফতরগুলোতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এতে দাফতরিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটলেও চলমান ছিল কার্যক্রম। অন্যদিকে পোষ্যকোটা বাতিল ও ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানোর জটিলতার কারণে ঝুলে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ভর্তি কার্যক্রম।
কর্মবিরতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির আওতায় এই কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনায় আমরা বোঝাতে চেয়েছি, এটা কোনো কোটা নয়। অন্য সরকারি চাকরিজীবীরা যেমন সুবিধা পান, এটাও তেমনই একটি সুবিধা। আমরাও কোটার বিরুদ্ধে। তবে এই সুবিধাকে কোটা বলে বিভ্রান্ত সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। আর বাতিল করলে সারাদেশে একযোগে বাতিল করা হোক।
এর আগে অফিসার সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৯ জানুয়ারি চলমান জটিলতা নিরসনে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি, ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ১৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
এদিকে, কোটা জটিলতায় ঝুলে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম। গত ৫ জানুয়ারি থেকে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে ১২ এপ্রিল ‘বি’ ইউনিট, ১৯ এপ্রিল ‘এ’ ইউনিট ও ২৬ এপ্রিল ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন নির্ধারিত রয়েছে। তবে চলমান সংকটে নির্ধারিত সময়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হয়েছিল আমাদের। আগামী সপ্তাহে আবেদন কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা করছি আমরা।
এর আগে, গত বছর সেপ্টেম্বর থেকেই পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। ফলে ৪% থেকে কমিয়ে ৩% রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। দাবির প্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি সহায়তা ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ১% কোটা রেখে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করে পরদিন প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে কিছু শিক্ষার্থী। শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীকে প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে তাঁরা। ফলে রাতেই উপাচার্য এই কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সম্পূর্ণ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।