আবারও বাড়ছে ওষুধের দাম

আপডেট: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:করোনার পর থেকে বেশ কয়েকবার বেড়েছে ওষুধের দাম। গত দুই বছরে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানো হয় ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ। কয়েকদিন থেকে আবারও বিনা নোটিশে এই ওষুধের দাম বাড়ছে। রাজশাহীর বাজারে এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় প্রতিটি ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা, সেকলো, অমিডন, মন্টিয়ার-মোনাস, এমকাস, রিভার্সএয়ারের মতো ওষুধগুলোর দাম বেড়েছে কারণ ছাড়াই। ৩৫ টাকার নাপা সিরাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ৬০ টাকার সেকলো কিনতে দিতে হচ্ছে ৭০ টাকা।

জ্বরের ‘ফাস্ট’ ৬০ মিলি সিরাপ ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। চোখের ‘আইমক্স’ ড্রপ ১৪০ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রতি পিস অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ‘ফেমিক্লাভ’ ২৫০ এমজি ট্যাবলেট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি পিস ফেমিক্লাভ ৫০০ এমজি (অ্যান্টিবায়োটিক) ট্যাবলেট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা করেছে। উচ্চ রক্তচাপের ওরবাপিন ৫/৪০’ ওষুধ ১৬ থেকে ১৯ টাকা, ব্যথার চিকিৎসার ‘ন্যাপ্রো প্লাস’ ৫০০ এমজি ১২ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ব্যথা উপশমের ‘নিউগালিন-৭৫’ ট্যাবলেট প্রতি পিস ১৮ থেকে ২০ টাকা, মাথা ঠান্ডা রাখার ওষুধ ‘লিমবিক্স’ ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা, ঘুমের ট্যাবলেট টেনিল-৩ ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি পিস ক্যালসিয়ামের ‘কোরালেক্স’ ট্যাবলেট ১১ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এরিস্টোফার্মার তৈরি কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত ১০০ মিলির ‘এভোল্যাক’ সিরাপ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের নাকের ‘আফরিন’ ড্রপ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয়েছে। গর্ভবতীদের বমি বন্ধে ‘একলিস প্লাস’ ট্যাবলেট প্রতি পিস ৩ থেকে ৫ টাকা হয়েছে। অপসোনিনের ৫০ মিলি ‘মেট্রিল’ সিরাপ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বেক্সিমকোর শিশুদের কাশির ১০০ মিলি ‘টোফেন’ সিরাপ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

২০২২ সালে দুই দফা বাড়ানো হয় বিভিন্ন ওষুধের দাম। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। তার মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম ৫০ থেকে শতভাগ বাড়ানো হয়। আর ৪০ টাকার অ্যামোক্সিসিলিনের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৭০ টাকা এবং ২৪ টাকার ইনজেকশনের দাম ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়াও মেট্রোনিডাজল, এমোক্সিলিন, ডায়াজিপাম, ফেনোবারবিটাল, এসপিরিন, ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের জেনেরিকের ওষুধ দাম বাড়ানো হয় ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ।

অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজারে অনেক ওষুধ বেশি দামেও কেনাবেচা চলছে। বিশেষ করে জেনেরিকের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে। আগে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি হলে অন্তত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে জানানোর নিয়ম ছিল। কিন্তু এখন কোম্পানিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হয়।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ফার্মেসির দোকানদাররা যে দাম বলে সে দামে ওষুধ কিনতে হয়। এক পাতা ওষুধের দাম মুখে যা বলবে তাই দিতে হচ্ছে। পাতাতে কোনো দাম লেখা থাকে না। আবার ওষুধের মেয়াদ আছে কি না সেটাও বোঝা যায় না। অনেক দোকানি ইচ্ছাকৃত বেশি দাম রাখে। আবার অনেক ফার্মেসি তুলনামূলক কম রাখে।

নগরীর সাহেববাজারের একটি ফার্মেসির বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাম বাড়াতে বলেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে নোটিশ পাঠানো হবে। এর মধ্যে তারা বিভিন্ন ওষুধের দামও বেশি রাখছেন। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি রাখা সম্ভব না। প্যাকেটের গায়ে যে মূল্য আছে তা দিয়ে বিক্রি করছি।

সাহেববাজারের এক ফার্মেসি মালিক বলেন, ওষুধের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি কোম্পানিগুলো। তবে তারা দাম বেশি রাখতে বলছে এবং ক্রেতাদেরও অবগত করতে বলছে।
লক্ষ¥ীপুর মোড়ের এক ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মিঠু জানান, কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নাপা সিরাপ কিনতাম ৩১ টাকায়। কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করতাম ৩৫ টাকায়। কিন্তু আমাদেরই এখন কেনা পড়ছে ৩৬ টাকা করে। যা আমরা ৪০ টাকা করে বিক্রি করছি। এখানে তো আমাদের করার কিছু নেই! একই দাবি করেন অপর ফার্মেসি ব্যবসায়ী সুমন। তিনি বলেন, ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীদের কষ্টের বিষয়টা সবাই দেখছে।

কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীরাও যে ধুঁকে ধুঁকে মরছি সেটা কেউ দেখছে না। আগে যে মূল্যে ওষুধগুলো কোম্পানি থেকে আমরা কিনতাম কয়েক মাসের ব্যবধানে তা দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ গুণ দামও হয়ে গেছে। আমাদেরও তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

আবারও ওষুধের দাম বাড়ানো হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষ বড় সঙ্কটে পড়বে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম লাগামহীন হওয়ায় সাধারণ মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে রোগীর খরচ হয় ৬৯ শতাংশ। ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়েছে। ফলে ওষুধ কেনার সামর্থ্য অনেকে হারাচ্ছেন।

এর আগের বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির নেতারা। বৈঠকে নেতারা দাবি করেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ওষুধের দামের সমন্বয় প্রয়োজন। ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের ফর্মুলার বাইরে যেসব ওষুধ রয়েছে, সেগুলোর কোনটার দাম কত হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। যেকোনো সময় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বা সরকার নতুন দাম ঘোষণা করবে। তবে কোন কোন ওষুধের দাম বাড়ছে, তা জানানো হয়নি।

বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের রাজশাহীর ডিপো ইনচার্জ রশিদ আহমেদ বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। তারা ফার্মেসি মালিকদের জানিয়েছেন। ঢাকায় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে হলে আরও বাড়বে।
অপসোনিন ফার্মাসিটিক্যালসের রাজশাহীর ডিপো ইনচার্জ এনএম জাফর সাদেক বলেন, আমাদের কোম্পানি এখনও কোনো ওষুধের দাম বাড়ায়নি। দাম বাড়ালে জানতে পারবো। আগে যে দাম ছিল সে দামে ফার্মেসিগুলোতে ওষুধ সরবরাহ করছি।

ওষুধ প্রশাসন রাজশাহীর সহকারি পরিচালক মাখনুওন তাবাসসুম বলেন, এখন ওষুধের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি দাম বেশি রাখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইচ্ছা করে কেউ দাম বাড়ায় তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেবো

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ