সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
নগর ভবনে বুলবুল সমর্থকদের ভাঙচুরের একাংশ- সোনার দেশ
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আবারো সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর তিনটায় অফিস কক্ষের তালা ভেঙে চেয়ারে বসা মাত্রই ফের বরখাস্তের আদেশ আসে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে সকালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে যান মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সকাল থেকে বিকেল অবধি দিনভর নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অবস্থান করেন। এসময় বুলবুলের সমর্থকরা ভাঙচুর চালান। বুলবুল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল বিকেল ৩টা পাঁচ মিনিটের দিকে ফ্যাক্সযোগে আদেশের কপিটি রাসিকে আসে। এর আগে ৩টা দুই মিনিটের দিকে বুলবুল তার অফিস কক্ষে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসেন। আদেশের খবর শুনে ৩টা ১২ মিনিটের দিকে তিনি বেরিয়ে যান।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, যে কারণ দেখিয়ে তাকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়েছে, সে কারণে আগেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে তিনি দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন। তাই মন্ত্রণালয়ের এ আদেশ তিনি আমলে নিচ্ছেন না এবং আজ সোমবারও তিনি অফিস করবেন।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মেয়র বুলবুলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহিত হয়েছে। আর স্থানীয় সরকারের (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ সালের আইনে মেয়রের নামে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহিত হলে তাকে বরখাস্তের বিধান রয়েছে। তাই মেয়র বুলবুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
এদিকে গতকাল সকালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নগর ভবনে যান। তবে এসময় মহানগর বিএনপির দু’একজন শীর্ষ নেতা ছাড়া অধিকাংশই বুলবুলের সঙ্গে ছিলেন না। নগর ভবনে ঢুকে মেয়র বুলবুল তার কক্ষে যান। এ সময় কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকায় তিনি পাশেই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরিফ উদ্দিনের কক্ষে গিয়ে বসেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি ওই কক্ষেই ছিলেন। এ সময় বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরদের তোপের মুখে পড়েন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কাউন্সিলরদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসময় বলেন, কে বা কারা মেয়রের কক্ষে তালা দিয়ে গেছে তিনি জানেন না।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন বুলবুল ও তার সমর্থকরা। একপর্যায়ে ভাঙচুর শুরু করেন বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাকর্মীরা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়রের কক্ষের পাশে তার ব্যক্তিগত সহকারীর অফিস কক্ষে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসময় অফিসের কাঁচের দেয়াল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর ও দলের নেতাকর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পুরো নগর ভবনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। দুপুর দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত বুলবুল রাসিকের সচিব খন্দকার মাহবুবুর রহমানের কক্ষে বসে ছিলেন।
এরপর রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম ফরিদ উদ্দিন পুলিশের উপস্থিতিতে কর্মচারীদের দিয়ে মেয়রের কক্ষের তালা ভাঙান। দুপুর তিনটা ৫ মিনিটের দিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুলকে তার কক্ষে নিয়ে আসেন। এসময় বুলবুল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে শাসান। বুলবুল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন. ‘আপনারা রিটাটারমেন্টে (অবসরে) যাবেন। তখন আপনাদের পেনশন আটকে দেয়া হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের যেসব কর্মকর্তা আর কর্মচারী আমার কক্ষে প্রবেশ নিয়ে ‘নাটক’ করলো তাদের তালিকা করা হবে। এদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ বুলবুলের এ ধরনের কথায় সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন।
বুলবুল তার কক্ষে প্রবেশের পর উপস্থিত গণমাধ্যমকমৃীদের বলেন, আমাকে অগণতান্ত্রিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নগরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু সরকার ভোটারদের মতামতকে সম্মান না দিয়ে আমার প্রতি নির্যাতন করছে। আর এ কাজে সরকারকে সহযোগিতা করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী কারা- তা আমরা চিহ্নিত করেছি। এদের ছাড় দেয়া হবে না। সময়মতো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসময় বুলবুলের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএওনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন অর রশিদ মামুন, অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাফিকুল ইসলাম শাফিক, এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুর রহমান, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু বক্কর কিনু, নারী কাউন্সিলর শামসুন নাহার, নাসিরা বেগমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে রাসিকের অধিকাংশ বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরা অনুপস্থিত ছিলেন।
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আবারো বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, তাহলে তিনি কীভাবে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন- এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রজ্ঞাপনটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয় মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। এরপরই গতকাল রোববার দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান বুলবুল।