আমদানির পরও কমছে না চালের দাম দাম কমার দাবি খাদ্য বিভাগের

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও খুচরা বাজারে কমছে না দাম। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের স্থানীয় বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। তাই দেশের খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ।

আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে। হাট-বাজারে ধানের আমদানি বেশি। মিল মালিকরা এসব হাট-বাজার থেকে নতুন ধান কিনে নিয়ে মজুত করছেন। চালকলগুলোতে দিনরাত ভাঙানো হচ্ছে ধান। শত শত টন চাল মোকামে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা চালও বাজারে নেমেছে। এরপরও এই অঞ্চলে নতুন-পুরনো সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে রাজশাহী অঞ্চলে সব ধরনের চালের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে। আর বাড়তি দামে বিপাকে পড়ছেন নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজশাহীর বিভিন্ন চালের আড়ত ও দোকান ঘুরে দেখা যায়, আটাশ জাতের প্রতি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় যার প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭৬ টাকা। গুটি স্বর্ণা বা মোটা চাল প্রতি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা ও জিরাশাইল চার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়।

দাম বাড়ার চিত্র পাওয়া যায় কৃষি বিপণন অধিদফতরেও। এদিন রাজশাহীতে চিকন চাল বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৭৮ টাকা কেজি, মাঝারি চাল বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ও মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে।

সাহেববাজারের চাল বিক্রেতা মোজাম্মেল হক বলেন, দুই সপ্তাহ আগে তারা আটাশ জাতের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করেছেন ৩ হাজার ৫০০ টাকায় যার প্রতি কেজির দাম ছিল ৭০ টাকা।
নিউমার্কেটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী রবিউল আলম বলেন, বাজারে নতুন ধান উঠলেও চালের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়ছে না। গত ছয় মাসে সব ধরনের চালের ক্ষেত্রে ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

রাজশাহীর চাল ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, গত এক বছরে চালের দাম এক টাকাও কমেনি। বরং কেজিতে তিন-চার টাকা করে বেড়েছে। তবে ডিসেম্বরের শেষ দুই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা করে বেড়ে গেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিন। তিনি জানান, ৯ জানুয়ারি রাজশাহী অঞ্চলের বাজারে মোটা চালের বাজার দর ছিল প্রতি কেজি ৪৯ টাকা ৫২ টাকা পয়সা। এ সপ্তাহে মোটা চালের বাজার দর প্রতি কেজি ৪৮ টাকা ৫২ পয়সা। মহানগর, জেলা ও শ্রমঘন এলাকার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে খোলাবাজারে (ওএমএস) কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে চাল বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। এর ফলে বাজারে চাল ও আটার মূল্যের উপর প্রভাব পড়েছে এবং চাল ও আটার মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। বাজারে দাম কমার কারণে খাদ্য বিভাগের সংগ্রহ অভিযান সফল হবে।

তিনি জানান, দ্রব্যমূল্যেও ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে। সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিভাগে ১৪ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

হিলি কাস্টমস ও বন্দরের তথ্যমতে, ১১ ই নভেম্বর থেকে ১৩ই জানুয়ারি পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় ২ হাজার ২৮৬ ট্রাকে ৯৩ হাজার ৫০ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে।

ভোমরা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮১ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকার চাল আমদানি করেছে। এরমধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪০টি আমদানিকারক ভারত থেকে ১৭ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে।
দর্শনা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সোয়া নয়টায় ভারতের গেঁদে বন্দর দিয়ে ৪২ ওয়াগনে রেলপথে এই চাল দর্শনা বন্দর ইয়ার্ডে পৌঁছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version