আমের দামে খুশি চাষিরা

আপডেট: জুন ৪, ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীতে বাগানগুলোতে এসব আম কম। এমন অবস্থায় চড়া দামে কেনা বেচা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম। ক্রেতা-কিক্রেতারা বলছেন, আমের এমন দাম অতীতের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। মৌসুমের শেষে দিকে আমের দাম বাড়লেও এবছর শুরুতেই দাম বেশি।

জানা গেছে, বানেশ্বররে সপ্তায় শনি ও মঙ্গলবার হাটবার হলেও আমের মৌসুমে পুরো সপ্তাজুড়ে কেনা-বেচা হয়। রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাটিতে জেলার সব উপজেলার আম কেনা বেচা হয়। এমন আম কেনা বেচা চলে মৌসুমের দেড় মাস। হাটে মৌসুমের শুরু দিকে ১ কোটি টাকা হলেও শেষ ভাগে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আম কেনা-বেচা হয় হাটটিতে। এই আম কেনাচেবাকে কেন্দ্র করে ৩ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর আম কম থাকায় ভাটা পড়েছে কাজে।

সোমবার (৩ জুন) বানেশ্বর বাজারে আকার ভেদে গোপালভোগ আম কেনা ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে, রাণীপছন্দ আম তিন হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, লক্ষণভোগ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, ক্ষীরশাপাতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, লেংড়া আম কেনাবেচা হয়েছে দুই হাজার থেকে আড়ায় হাজার টাকা মণ দরে। এছাড়া গত মৌসুম যে আম ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। সেই আম এই মৌসুমে কিনতে হবে ৮০ থেকে ৯০ টাকা প্রতিকেজি। কারণ এই বছর আম তুলনামূলক আমের ফলন কম হয়েছে।

আম চাষি আবু হেনা বলেন, বিগত বছরগুলোতে আম চাষি তেমন দাম পাননা। তাদের লোকসান হয়। হাটে নিয়ে আসলে ক্রেতা পাওয়া যায়না। কিন্তু এবছর গাছে আম কম। তবে চাহিদা কমেনি। আমের চাহিদা ভালো আছে। দামও ভালো আছে। তার ধারণা ঈদুল আযহার পরে আরও বাড়তে পারে আমের দাম।

আমের দাম ভালো পাচ্ছেন জানিয়ে বিক্রেতা ইনছান আলী জানান, তার ৪৫ বছর বয়স হলেও ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি প্রথমে বাগান কিনে ও পরে আম বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন। কিন্তু কখনও এমন আমের দাম তিনি দেখেনি। বা তিনি বিক্রি করেননি। তার দাবি এমন দাম থাকলে বাগান মালিক ও চাষিরা ভালো টাকা পাবে।

বানেশ্বর হাটের আমের আড়ৎদার শামীম আহম্মেদ বলেন, এবছর তুলনায়মূলক অনেক দাম বেশি। গত বছর যে আম কেনা বেচা হয়েছে ১ হাজার টাকা মণ দরে। সেই আম কেনা বেচা হচ্ছে ২৫০০ টাকা মণ দরে। অর্থাৎ মণে ডাবলের বেশি টাকা পড়ছে। গতবছর আম কেনাবেচায় এক ধানের সুবিধা ছিল। কিন্তু এইবছর সেই সুবিধা নেই। কারণ হাটে আম কম, কিন্তু ক্রেতা বেশি। তাই যেমন তেমন আম ভালো দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। তবে এই প্রথম আমের সর্বোচ্চ দাম মৌসুমের শুরুতে। পরে কি হবে তা বোলা যাচ্ছে না।

বানেশ্বর আম হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, পুরো হাট জুড়ে ২০০টি আমের আড়ৎ রয়েছে। ২০০ আমের আড়তে ৩ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে। প্রতিটি আমের আড়তে ১৫ থেকে ২০ জন করে শ্রমিক কাজ করে। যদি ১৫ জন শ্রমিক ধরা হয় তাহলে ৩ হাজার হচ্ছে। এটা শুধু শ্রমিক। এছাড়া রয়েছে মালিক ও কর্মচারিরা। মূলত এই শ্রমিকরা আমকে কেন্দ্র করে সবধরনের কাজ করে থাকে। এরমধ্যে আমের বোটা ভাঙ্গা, ফ্যানের বাতাসে আটা শুকানো, পরিস্কার করে খবরের কাগজে মোড়ানো, ক্যারেটে (আমের ঝুড়ি) সাজানো, সেই ক্যারেট ভর্তি অবস্থায় ট্রাকে উঠোনো কাজগুলো করে থাকে।

তিনি বলেন, বানেশ্বর হাটের আম হাট ইজারা হয়েছে ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বানেশ্বর বড় হাট হিসেবে জায়গার অভাব। তাই সড়কে উপরে হাট বসে। তবে যানচলাচলে সমস্যা হয়না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৌসুমে আম কেনা-বেচা শুরু হলে সড়কে যানজট না হয় সেই জন্য লোক রাখা হয়। তার হাটে আম বিক্রি করতে আসা যানবাহনগুলো সাইডে রাখতে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়া যানবাহনগুলো আস্তে আস্তে যাতায়াত করে এই জায়গায়।

প্রসঙ্গত, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ টন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ