মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
বাজারে নজরদারি চাই
‘রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের আবাদ মোটেও ভাল হয় নি। যাও বা হয়েছি তা তীব্র তাপদাহের ফলে গুটি অবস্থাতেই আম ঝরে গেছে। ফলে চলতি আম মৌসুমে বাজারে আমের দাম গতবারের চেয়ে দ্বিগুন- তিনগুন বৃদ্ধি পাবে।’ এমনই দাবি করছেন আমচাষি. বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যেই এসব কথা বাজারে বেশ চালু আছে। আম উৎপাদন ও বাজারজাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা এভাবেই সভা-সমবেশে প্রচার করছেন।
ইতোমধ্যেই এই প্রচারের ফলস্বরূপ নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভাবতে শুরু করেছেন এবার বুঝি তাদের আর আম খাওয়া হবে না। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমির আমগাছে ফলন এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। তবে ঝড়ের কবলে না পড়লে এ আম দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবারেও একই ছিল লক্ষ্যমাত্রা।
অর্থাৎ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে গত বছরের উৎপাদনের সাথে এবারের উৎপাদনের কোনো হেরফের হবে না। যদি ঝড় হয় সে ক্ষেত্রে কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে আমের উৎপাদন। সরকারি দফতরের এই তথ্য এবং আম উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তারা যা বলছেনÑ তা হলে কোনটা সঠিক। বরং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে এবার আম গত বছরের তুলনায় বড় হবে। তাবদাহে যে পরিমাণ গুটি ঝরেছে তা মোটেও অস্বাভবিক নয়। রাজশাহী অঞ্চলে এবারে ঝড়ের বাহুল্যতা না থাকায় গুটি ঝরেছেও কম। কিন্তু আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা এবার আম ব্যবসায় বিপর্যয়ের মুখে আছেন। তা হলে কোন পক্ষ সঠিক তথ্য জানাচ্ছে। আর সরকারি দফতর তথ্য লুকাতে যাবেই বা কেন?
এবার আমের বাজারে সিন্ডিকেশন হবে এটা আগে থেকেই চাউর হচ্ছিল। আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রচার-প্রপাগান্ডায় সিন্ডিকেট বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেই অভিযোগ করা হচ্ছিল। হয়তো আমের বাজারে সিন্ডিকেটই গড়ে উঠতে যাচ্ছে!
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কুমরপুর গ্রামে আমবাগান পরিদর্শন ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সিন্ডিকেটের প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, আম ও কৃষি পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট যেন না হয় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কৃষক আম নিয়ে যেন সঠিক মূল্য পান এবং ভোক্তা যেন নায্য মূল্য আমসহ কৃষি পণ্য পান সেদিকে সকলকে নজর রাখতে হবে।
সিন্ডিকেট করে কেউ যাতে আম নিয়ে ভোকাদের জিম্মি করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যারা নিয়োজিত আছে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন সে প্রত্যাশাই রইল।