আমের বাগান কিনতে আগ্রহী নয় ব্যবসায়ীরা II বিপাকে বাগান মালিকরা

আপডেট: মে ২৮, ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:


চাঁপাইনবাবগঞ্জ এ বছরে মুকুল এসেছিল দেরিতে। বাগানে এবার সেভাবে আম নেই। তারপরও আমচাষিরা বসে নেই। চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচর্যা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসবে নানা ধরণের মিষ্টি জাতের আম।

জানা গেছে আমের শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগাম আমের বাগান বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছেন এখানকার বাগান মালিকরা। গাছে আম নেই এমন খোঁড়া অজুহাতে বাগান কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে বাগান মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাদের দাবি, এবার মৌসুমে বাগান মালিকদের গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারজাত করতে হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য বলছে, গতবারের তুলনায় মাত্র ১৬ হেক্টর বেড়ে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে। এবার আমের মুকুল এসেছে ৭৩ শতাংশ গাছে। যা গতবছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম। চলতি বছর আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিকটন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিকটন বেশি।

তারা জানান, এবারের মৌসুম আমের ফলনের জন্য অফ ইয়ার বা কম ফলনের বছর। অফ ইয়ার হওয়ার পরেও জেলার বড় বড় আমের বাগানগুলোর গাছে আশারনুরুপ আমের ফলন হয়নি।
একাধিক বাগান মালিকরা জানাচ্ছে, সাধারণত বছরের শেষ দিকে আমের গাছে মুকুল আসে। তারপর থেকে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। মুকুল ফেটে গুটি বের হলেই শুরু হয় আগাম আমের বাগান বেচাকেনার কার্যক্রম। কিন্তু এবার অত্যাধিক শীত আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে মুকুল এসেছে বাগানের মাত্র ৭০ শতাংশ আম গাছে। তবে ফাগুনের বৃষ্টিতে আমের মুকুল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথম দফায় হোঁচট খাওয়ার পরেও বাগান মালিকরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। যা তাদের কাপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের আমচাষি শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি বছর ২০ বিঘা আমবাগান এক বছরের জন্য ১০ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। ক্রেতারা ভালো দাম বলছেন না। তার আশা কিছুটা আমের দাম ভালো পেলে পুঁজি উঠে আসবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের বাগান আছে শিবগঞ্জে। সাধারণত ব্যবসায়ীদের আগ্রহ এই উপজেলাকে ঘিরেই। এখানকার আমবাগানি আবদুল গাফফার বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের ফলন খুবই কম, যা আমাদের খুব ভাবাচ্ছে। আগাম আমের বাগান বিক্রি করতে গেলেও খুব বেগ পেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বাগান দেখতে আসছে। কিন্তু গাছে আম না থাকার ফলে তারা কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তা বাগানের দাম বলছে কিন্তু সেটাও অপ্রত্যাশিত দাম।

বোয়ালিয়া আমবাগানী এমদাদুল হক বলেন, আমার চারটা জায়গায় বাগান আছে। সেসব বাগানগুলোয় এবার আমের ফলন খুবই কম। তাও বাড়তি দামে কীটনাশক-রাসায়নিক ব্যবহার করে গাছের পরিচর্যা করেছি। আগাম আমের বাগান বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বাগান দেখে বলছে আম নাই। যার জন্য তারা নায্য দাম বলছে না। কম দামে বাগান বিক্রি করতে গেলে আমার সব পুুঁজি হারিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত জেলার বাগান মালিকরা অন্যের কাছে আম হিসেবে বাগান বিক্রি করে। এবার অনেকেই বাগান বিক্রি করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় আমাদেরই গাছ থেকে আম নামিয়ে বিক্রি করতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগাছগুলোয় মুুকুল কম এসেছিল। তবুও কম মুকুল নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন এখানকার চাষিরা। কিন্তু ফাগুনের বৃষ্টিতে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে আমের কাঙ্ক্ষিত গুটি আসেনি। যার কারণে এবার আমের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্যই বাগানগুলোর অগ্রিম ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েকধরে এখানকার আম চাষিরা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও যদি এমন হাল হয় চাষিদের তাহলে জেলার অর্থনীতিতে পড়বে বিরুপ প্রভাব। এ সঙ্কট নিরসনে চাষিদের প্রণোদনার দরকার বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, আগাম আমের বাগান বিক্রি করতে যদি কোনো বাগানি পরামর্শ চায় তাহলে তাদের পরামর্শ দেওয়া হবে।

Exit mobile version