আম্পায়ার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাবি শিক্ষক সুপ্রিয়া রানী দাস

আপডেট: মে ৮, ২০২৫, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

রাবি শিক্ষক সুপ্রিয়া রানী দাস। ছবি: সংগৃহীত

রাবি প্রতিবেদক :


শিক্ষা ও খেলাধুলা—দুই ভিন্ন জগতে সমান দক্ষতায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে চলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রিয়া রানী দাস। ক্রিকেট মাঠে একসময়ের প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় ছিলেন তিনি, আর এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করছেন সুনামের সঙ্গে।

ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি সুপ্রিয়ার অনুরাগ ছিল প্রবল। পারিবারিক অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তার বাবা, যিনি একসময় ছিলেন একজন ভলিবল খেলোয়াড়। তবে পরিবারে তিনিই প্রথম, যিনি পেশাদার ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার পর অনেকেই খেলা ছেড়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বললেও, তার শিক্ষিকা হোসনে আরা ম্যামের উৎসাহে তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার সাহস পান।

ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ছিলেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল যেমন ঢাকা বিভাগ, সিলেট বিভাগ, আবাহনী, মৌলভীবাজার জেলা এবং দীপালি যুব সংঘের হয়ে খেলেছেন। ২০১১ সালে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে জায়গা পেলেও স্নাতকোত্তরের চাপে ক্যাম্পে যোগ দিতে পারেননি।

২০১৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করার পর মূলধারার ক্রিকেট থেকে কিছুটা সরে আসেন। তবে ২০২২ সালে মিরপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের মধ্য দিয়ে আবার নতুনভাবে মাঠে ফেরেন। এরপর থেকে তিনি প্রায় ২৫টিরও বেশি ম্যাচে রেফারিং ও আম্পায়ারিং করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচও।

কর্মব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মধ্যেও কীভাবে এত কিছুর সমন্বয় ঘটান এই প্রশ্নে সুপ্রিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষ করে বিকেলেই ঢাকায় রওনা হই। পরদিন ভোরে ম্যাচ পরিচালনা করি। শনিবার রাতেই আবার রাজশাহী ফিরে পরদিন সকালে ক্লাসে হাজির হই।’

কঠোর পরিশ্রম আর সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার মাধ্যমেই তিনি দুই দায়িত্ব সামলে চলেছেন।বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক রেফারি প্যানেলের সদস্য। ভবিষ্যতে এলিট প্যানেলে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নও রয়েছে তার। তবে তিনি বলেন, ‘এই পথটা অনেক দীর্ঘ। অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা আর পরিশ্রম ছাড়া এখানে পৌঁছানো যায় না। আমি যা করি, মন দিয়ে করি।’

নারীদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং পেশা হিসেবে গ্রহণে উৎসাহ দিতে সুপ্রিয়া বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, খেলাধুলা মানেই পড়াশোনার ক্ষতি। কিন্তু আমি খেলেছি, পড়াশোনাতেও ভালো করেছি। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।’
দৃঢ় মনোবল, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাস—এই তিনে ভর করে সুপ্রিয়া আজ এক বিরল দৃষ্টান্ত। তার এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং নারীর ক্ষমতায়নের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।